বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একজন শীর্ষ উপদেষ্টা সোমবার বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, ঢাকা সব সময় নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশের বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার ভারতে অবস্থান দীর্ঘ হলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন এই মন্তব্য করেন।
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এটি একটি কাল্পনিক প্রশ্ন। কেউ যদি কোনো দেশে থাকেন তাহলে সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেন? এর কোনো কারণ নেই।' তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি বড় বিষয়। প্রসঙ্গত, বিতর্কিত চাকরির কোটা ব্যবস্থা নিয়ে তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর ৭৬ বছরের শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে এবং ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, 'দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নির্ভর করে উভয় পক্ষের স্বার্থের ওপর। বন্ধুত্বও দুই ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহের সম্পর্ক। স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বন্ধুত্বের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায়।'
বাংলাদেশ সবসময় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়: তৌহিদ হোসেন
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উভয় পক্ষেরই স্বার্থ রয়েছে এবং তারা নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করবে। তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সবসময় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে। এর আগে তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাসহ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের তার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তাদের সহায়তা কামনা করেন। হোসেন ভারতীয় কূটনীতিকদের বলেছেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে আমাদের সমস্ত বন্ধু এবং অংশীদার দেশ অন্তর্বর্তী সরকার এবং আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াবে। কারণ আমরা বাংলাদেশের জন্য নতুন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছি।'
আমাদের নীতি সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা: হোসেন
হোসেন আরও বলেন যে তিনি কোনও দেশের সঙ্গে কোনও কমিটমেন্ট ত্যাগ করছেন না, কারণ এই প্রতিশ্রুতিগুলি কোনও ব্যক্তির নয়, বাংলাদেশের দ্বারা করা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রকে তৌহিদ হোসেনের প্রথম সংবাদিক সম্মেলনের সময় সাংবাদিকরা তাকে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি জবাবে বলেন, বিষয়টি আইন মন্ত্রকের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এবং আইন মন্ত্রক এ ধরনের অনুরোধ করলেই আমার কার্যালয় সাড়া দেবে। তৌহিদ হোসেন বলেন, 'আমাদের নীতি হলো আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।'
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই: হোসেন
ভারতে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তৌহিদ হোসেন বলেন, 'আমরা ভারত ও চিনসহ সবার সঙ্গে মসৃণ ও ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।' ভারতের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে চাইলে হোসেন বলেন, দুই দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একজন কূটনীতিক এবং প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হোসেন বলেন, 'এটা গুরুত্বপূর্ণ যে জনগণ বুঝতে পারুক যে ভারত বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। আমরা এটা চাই, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) সম্পর্ককে সেই দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।