হিন্দির ট্রেন্ড হঠাৎ করে বাংলাতেও। এত দিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় বার বার বিভিন্ন হিন্দি সিনেমার বিরুদ্ধে বয়কট ট্রেন্ড খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলা ছবি এর আওতার বাইরেই ছিল। এ বার খোদ বাংলাতেই এই ট্রেন্ড নতুন করে দেখা গেল। এর লক্ষ্য সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুটি বাংলা ছবি ধর্মযুদ্ধ (Dharmajuddha) এবং বিসমিল্লাহ-কে (Bismillah) কেন্দ্র করে। মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া এই ছবি দুটি নেটিজেনদের একাংশের বিষ নজরে পড়েছে।
একের পর এক সোশাল পোস্টে ছবি দুটিকে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। যারা এই ট্রেন্ড তৈরি করতে চাইছেন তাদের বক্তব্য, টলিউড হিন্দুদের টার্গেট করছে। তাই বন্দে মাতরম-এর জায়গায় এখন বিসমিল্লাহ বলছে। বিষয়টি শুরু হয় ঋদ্ধি সেনের (Riddhi Sen) একটি পোস্টকে ঘিরে। যেখানে তিনি সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক থেকে দুটি লাইন তুলে নিয়ে লিখেছেন, “যত ভাঙন তুলে নিক এ মন, বলতেই হবে বিসমিল্লা। বিসমিল্লাহ মুক্তি পাচ্ছে কালকে।” এই পোস্টেই অনেকে কমেন্টে বিষোদ্গার করেছেন।
ছবির অন্যান্য অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়েও কুমন্তব্য জায়গা করে নিচ্ছে সোশাল মিডিয়া। হেট স্পিচ থেকে ছাড় পায়নি শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের (Subhashree Ganguly) একরত্তি শিশু ইউভান-ও। যে সমস্ত প্রোফাইল থেকে এই কমেন্ট এবং হেটস্পিচ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তার বেশিরভাগই 'নামগোত্রহীন'। যাকে সোশাল মিডিয়ার ভাষায় ফেক প্রোফাইল বলা হয়ে থাকে। যাদের কোনও প্রোফাইলে নাম রয়েছে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ নামে একটি পেজ পর্যন্ত রয়েছে।
সেই পেজ থেকে একটি লম্বা-চওড়া পোস্ট করা হয়েছে। যাতে লেখা, 'নিজের পকেটের টাকা খসিয়ে 'বিসমিল্লা' আর 'ধর্মযুদ্ধ' - মুভি দেখার কোনো ইচ্ছাই নাই। পকেটের পয়সা খরচ করে নিজের মাথায় গোঁজা ভরে মাথাটাকে আস্ত একটা ডাস্টবিনে পরিণত করতে কে চায়?
১) পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়নি এমন নয়, কিন্তু 'গীতার শ্লোক আওড়ে কেউ বৃদ্ধ নারীর গলায় ছুড়ি বসাচ্ছে' এই অভিযোগ কোনোদিন কোনো অন্য ধর্মের মানুষও করে নি, করবেও না। ভুভারতে এমন দৃষ্টান্ত পাবেন না। এসব দেখিয়ে কাদেরকে ছোট করতে চাইছেন?
২) 'একজন কৃষ্ণভক্ত নারী মুসলমান বাঁশিবাদকের মধ্যে কৃষ্ণকে দেখছে' - এটাও দেখতে হবে? ভাই যারা কৃষ্ণভক্ত নারী, তারা মীরা-র মতো। এর তার মধ্যে তারা কৃষ্ণকে দেখে লুল লুল করে তার প্রেমে পড়ে যায় না।
বন্ধ করুন এসব ... পয়সা দিয়ে এইসব নোংরা উৎপাদন কেন দেখতে যাবো বলতে পারেন?
ফিল্মের নাম 'বিসমিল্লাহ' দিয়ে কয়জন সত্যিকার মুসলিমকে সিনেমাহলে আনতে পারবেন, সন্দেহ আছে! তারাও ধার্মিক, আপনাদের ফিল্ম দেখতে নিজেদের ঈমান আর পয়সা তারা নষ্ট করবে বলে মনে হয় না। কারো ধর্মীয় নির্দেশের থেকে আপনার ফিল্ম বেশি শক্তিশালী - এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
যারা আপনাদের ফিল্ম দেখে, তাঁদেরই পয়সা নিয়ে তাদের সমাজকে, তাদের ধর্মকে অসম্মান করছেন? তারাই বা কেন দেখতে যাবে এসব জিনিস, নিজের পয়সা খরচ করে?
এর পরেও যারা এসব ডাস্টবিনের অযোগ্য ফিল্ম গুলো দেখতে চান, তারা দেখুন। কিন্তু পয়সা খরচ করে সিনেমাহলে গিয়েই দেখতে হবে, এমন মাথার দিব্যি তো তাদেরকে কেউ দেয়নি। পয়সা বাঁচিয়ে কিকরে দেখতে হয়, তারা এমনিই জানেন।
তবে, যারা এসব ফিল্মের সাথে যুক্ত, তাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ, মানুষকে সেভিংস -এ উৎসাহিত করার জন্য।'
বাংলা ছবি বয়কট করার এই ট্রেন্ড নতুন। তবে হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে এই ট্রেন্ড এখন খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রায় সব সিনেমা মুক্তির আগে থেকে বয়কট ট্রেন্ডে ছয়লাপ হয়ে যায় সোশাল মিডিয়া। সাম্প্রতিককালে রাধে থেকে লাল সিং চাড্ডা পর্যন্ত সব ছবির ক্ষেত্রে এই ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। যে ছবি মুক্তির ঢের দেরি রয়েছে তা নিয়েও ট্রেন্ড দেখা গেছে সোশালে।