প্রেমে পড়লে মানুষ অনেক কিছু করে। কেউ কবিতা লেখেন। কেউ ছবি আঁকেন। কেউ আবার প্রিয়তমার কথা ভেবে ভেবেই দিন রাত কাটিয়ে দেন। আবার কেউ কেউ RTI-ও করেন। অবাক হলেন? আসলে এমনই কাজ করলেন মেদিনীপুরের এক প্রেমিক যুবক। দুরপাল্লার ট্রেনে আলাপ হওয়া সুন্দরীর খোঁজে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করলেন তিনি।
প্রেমিক যুবকের নাম তুহিনরঞ্জন। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে বাড়ি। তবে কর্মসূত্রে থাকেন বিশাখাপত্তনমে। সম্প্রতি ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময়ে ভাইজ্যাক থেকে এক দক্ষিণী তরুণী ট্রেনে ওঠেন। তাঁর কোচের সামনের সিটে বসেন তিনি। প্রথম দেখাতেই প্রেম। যেন রাস্কিন বন্ডের 'দ্য আইজ হ্যাভ ইট' গল্পের কোনও দৃশ্য।
দু'জনের চোখাচোখি, লাজুক হাসিতে তুহিনের বুকে যেন ঢেউ ওঠে। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে যা হয়... মুখ ফুটে কিছু বলতেই পারেননি। এভাবে চোখে চোখে কথাতেই কোথা থেকে যেন ঘণ্টা তিনেক কেটে যায়।
এভাবেই দেখতে দেখতে পালাসা স্টেশন এসে যায়। সেখানেই সম্ভবত নেমে যান তিনি। তারপর ট্রেনে অনেক খোঁজেন তুহিন। আর সেই দক্ষিণী সুন্দরীর খোঁজ পাননি তিনি।
তারপর থেকেই সবকিছুই শিকেয় উঠেছে তুহিনের। কিছুতেই ভুলতে পারছেন না সেই তরুণীর মুচকি হাসি। কেন ফোন নম্বর নিলেন না, সে কথা ভেবে ভেবে রাতে ঘুমাতেই পারছেন না।
এরপর তুহিন ছুটির দিনে কখনও ভাইজ্যাক আবার, কখনও পালাসা স্টেশনে চলে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে আশেপাশে হন্যে হয়ে খুঁজছেন সেই তরুণীকে। কিন্তু তা করেও কোনও লাভ হয়নি। তরুণীর খোঁজ পাননি তুহিন।
তাঁর দাবি, সেদিন ট্রেন থেকে নামার সময়ে তরুণী তাঁকে ফোন নম্বরও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
এরপরেই আইনের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তথ্য জানার অধিকার আইনে তিনি ট্রেনের কামরার যে আসনে যুবতী বসেছিলেন, তার ফোন নম্বর জানার জন্য আর্জি করেন তিনি। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সেই আর্জি খারিজ হয়ে যায়। তবে তাতে দমেননি তুহিন। ফের আরটিআই করেন। তবে এবার দাবি করেন, ফোন নম্বর দিতে হবে না, তাঁর বার্তাটুকু যেন তরুণীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আর সম্ভব হলে রেল পুলিশের উপস্থিতিতেই যেন ভাইজ্যাক বা পালাসা স্টেশনে দু'জনের দেখা করানোর ব্যবস্থা করা হোক। তুহিন আশাবাদী, মানবিকতার দিক থেকে রেল তাঁর এই স্বপ্নপূরণ করবে।