২২ নভেম্বর থেকে দেশের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হয়েছে সুর ও কথার মহাকুম্ভ 'সাহিত্য আজতক ২০২৪'। তিন দিন ধরে চলবে এই অনুষ্ঠান। অংশ নিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা লেখক, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা। গান-বাজনা, কবিতা ও ভাবনার সমাহার ঘটতে চলেছে। সাহিত্যের সবচেয়ে বড় মহাকুম্ভ 'সাহিত্য আজতক ২০২৪' মঞ্চে 'সংবিধানের ৭৫ বছর' সেশনে সংবিধান এবং দলিত সমাজ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
'সাহিত্য ও সমাজে দলিত' বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন দেশের দলিত চিন্তাবিদ ও লেখকরা। এর মধ্যে লেখক অধ্যাপক রজত রানি মীনু এবং কবিতেন্দ্র ইন্দু নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। কবিতেন্দ্র ইন্দু বলেন,'এক দেশের মধ্যে অনেক দেশ আছে। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে আপনি উপরের দিকে তাকালে বিমান দেখতে পাবেন। আবার মাটিতে তাকালে গরুর গাড়িও দেখতে পাবেন। পরিবর্তন এসেছে। তবে তার গতি মন্থর। বাড়িতে অ্যালেক্সা পাওয়া যাবে। আবার শিলমোড়াও মিলবে'।
কবিতেন্দ্রু ইন্দু আরও বলেন,'ট্রেনে এসি শ্রেণির সঙ্গে সাধারণ বগি রয়েছে। গ্রামের দলিতদের সঙ্গে শহরে বসবাসকারীদের পরিস্থিতি ভিন্ন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলিত শ্রেণি এখনও সাধারণ বগির মতো। শহরগুলিতে বর্ণ বৈষম্য দেখা যায় না। শহরে জাতপাত দেখতে পাবেন খালি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে। ফলে যেখানে পরিস্থিতির বদলও হয়েছে, সেটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো, এমনটাও নয়।
সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত,'আমি সংরক্ষণ ব্যবস্থার তীব্র সমালোচক। এই ব্যবস্থা কখন নেওয়া হয়েছিল? তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ তোলা উচিত নয়। সংরক্ষণের চেয়ে ভালো বিকল্প না পেলে তা প্রত্যাহার করা অনুচিত'।
দলিত চিন্তাবিদ কবিতেন্দ্র ইন্দু আরও বলেন,'মেধা শুধু উচ্চবর্ণেই জন্মায়, এমনটা নয়। আমাদের সমাজেই মানুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। দলিতদের অবস্থার সঙ্গেগ সংরক্ষণের কোনও যোগ নেই। যখন সকলের শিক্ষার অধিকার সমান হবে, তখনই সংরক্ষণ তুলে দেওয়া উচিত। এখানে সরকারি শিক্ষা ও বেসরকারি শিক্ষা রয়েছে। হিন্দি মাধ্যম আলাদা আর ইংরেজি মাধ্যম আলাদা। মৌলিক পরিবর্তন করুন যাতে সংরক্ষণের প্রয়োজন না হয়। প্রতিটি জাতের জনসংখ্যা জানা উচিত। জাতিগত গণনা হওয়া উচিত'।
অধ্যাপক রজত রানি মিনু বলেন,'৭৫ বছর কেটে গিয়েছে। দলিতদের অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শুধুমাত্র ব্রিটিশদের চলে যাওয়া আর ভারতীয়দের শাসনভার গ্রহণ স্বাধীনতা নয়। যে দলিতরা আজ শিক্ষাক্ষেত্রে উজ্জ্বল, তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। শিক্ষার মাধ্যমেই দলিত সমাজের উন্নতি সম্ভব। তারপর আসে স্বাস্থ্য। গত কয়েক বছরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। তা বন্ধ করতে হবে। সবাইকে সমান শিক্ষা দিতে হবে। গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। এদের মধ্যে রয়েছে দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষ ও আদিবাসী। অন্যান্য বর্ণের সংখ্যা তুলনামূলক কম'।