
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন আবারও বাড়াতে চলেছে মোদী সরকার। অষ্টম বেতন কমিশনকে ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। চলতি বছরের শুরুতেই বেতন কমিশন গঠনে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এবার প্রশ্ন: বেতন বেড়ে কি তিনগুণ হবে? এটা কি সম্ভব? যদি হ্যাঁ, তাহলে কীভাবে? এবং যদি না হয়, তাহলে কতটা বাড়বে বাড়বে? বেতন কমিশন কোন কোন শর্তে (TOR) কাজ করবে? বেসিক স্যালারিই বা বেড়ে কত হবে? পুরোটা জানুন এই প্রতিবেদনে।
অষ্টম বেতন কমিশনের রূপরেখা তৈরি করেছে সরকার। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি কার্যকর হতে পারে। এতে উপকৃত হবে প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগী। শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক বেতন কমিশনের ইতিহাস। প্রথম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি স্বাধীনতার ঠিক আগে ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই চালু হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, সরকারি কর্মচারীদের চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত বেতন নিশ্চিত করা। এরপর ১৯৫৯ সালের ১ জুলাই আসে দ্বিতীয় বেতন কমিশন। তৃতীয় বেতন কমিশন ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি। চতুর্থ বেতন কমিশন কার্যকর হয় ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি পঞ্চম বেতন কমিশন দিয়ে আমূল বদলে আসে। সেই সময় ভারতের বাজার বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে উপকৃত হয়েছিল বাজার। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া ষষ্ঠ বেতন কমিশন সমান কাজের জন্য সমান বেতনের নীতিকে পোক্ত করে। সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে আনা। এবার অষ্টম বেতন কমিশন সম্পর্কে কথা বলা যাক। এবার সরকার কমিশনের জন্য নিয়ম তৈরি করেছে, যা হল TORs (Terms of Reference)। কমিশনের সুপারিশের পরিধি এবং নির্দিষ্ট বিষয়গুলিকে বেঁধে দেওয়া। আগের কমিশনগুলি মূলত কর্মচারীদের বেতন এবং ভাতার উপর নজর দিত। তবে এবার, TOR এই বিষয়ে ততটা নজর দেয়নি। কমিশনকে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, সরকারি ব্যয়, রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলিতে বেতন কাঠামোর মতো বিষয়গুলিও বিবেচনা করতে হবে। এর অর্থ হল এটি আর কেবল বেতনের বিষয় নয়, বরং অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এবার, জেনে নেওয়া যাক অষ্টম বেতন কমিশনে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির বিভিন্ন স্তরে বেতন কীভাবে বাড়বে। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, অষ্টম বেতন কমিশনের পর যাঁদের মূল বেতন ₹১৮,০০০, অর্থাৎ লেভেল একের কর্মচারী, তাঁদের মূল বেতন বেড়ে হবে আনুমানিক ৪৪,২৮০ টাকা। লেভেল ২ মূল বেতন ₹১৯,৯০০ থেকে বেড়ে ৪৮,৯৭৪ টাকা হবে। লেভেল ৩ বেতন ₹২১,৭০০ টাকা থেকে হবে ৫৩,৪৬৬ টাকা। লেভেল ৪ বেতন ₹২৫,৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৬২,৮৫০ টাকা। লেভেল ৫ মূল বেতন ₹২৯,২০০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ₹৭১৯২৩ টাকা। লেভেল ৬ মূল বেতন ₹৩৫,৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৭,৯২৪ টাকা হবে। লেভেল ৭ বেতন ৪৪,৯০০ টাকা বেড়ে হবে ১,১৫,৫৪ টাকা।
এই পুরো হিসেব করা হয়েছে ২.৪৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের উপর। সহজ ভাষায়, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বলতে বোঝায় যে পুরানো বেসিক বেতন কত গুণ বাড়বে। সপ্তম বেতন কমিশনে এটি ছিল ২.৫৭। এর অর্থ হল নতুন বেসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল আপনার পুরানো বেতনকে ২.৫৭ দিয়ে গুণ করে। এই কারণে ন্যূনতম বেসিক বেতন ₹৭,০০০ থেকে বেড়ে ১৮,০০০ টাকা হয়েছে। অষ্টম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর সম্পর্কে বিভিন্ন অনুমান রয়েছে। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট মোতাবেক তা ২.২৮ থেকে ২.৮৬ থাকতে পারে। অনেকের দাবি তা ৩ পর্যন্তও যেতে পারে। প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষ গর্গের মতে,এবার সরকার একটু সতর্ক থাকতে পারে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর প্রায় ১.৯২ হতে পারে। ন্যূনতম বেসিক বেতন ₹১৮,০০০ থেকে প্রায় ₹৩৪,৫৬০ টাকা হবে। এর মানে হল এবার তিনগুণ বেতন বৃদ্ধির আশা খুব কম।
এবার পুরো বেতনের খেলাটা বুঝুন। সরকার যখন নতুন বেতন কমিশন চালু করে, তখন এটি কেবল মূল বেতন বৃদ্ধির কথা নয়; পুরো বেতন কাঠামোর পরিবর্তন হয়। মূল বেতনের উপরে সরকার মহার্ঘ ভাতা (DA) যোগ করে। যা মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতি ৬ মাস অন্তর বৃদ্ধি পাবে। এরপর আসে বাড়ি ভাড়া ভাতা (HRA)। মেট্রো শহরগুলিতে তা বেশি। ছোট শহরগুলিতে কিছুটা কম। অবশেষে, ভ্রমণ ভাতা (TA) রয়েছে। যা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত বা অফিসিয়াল ট্যুরের খরচ। এই সব যোগ করে মাসে বেতন পান কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা।
মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬। বেতন বেড়ে হবে ৫১,৪৮০ টাকা। সেই সঙ্গে অন্যান্য ভাতা যোগ করলে মোট বেতন হবে ৭০,০০০ টাকা। প্রশ্ন হল, সরকার এই সমস্ত অর্থ কোথা থেকে পাবে? কোষাগারের উপর কতটা বোঝা চাপবে? অষ্টম বেতন কমিশনের সুবিধা কী? আগের বেতন কমিশনের থেকে কতটা আলাদা?
সরকারি কোষাগার ভরে জিএসটি এবং একাধিক কর্পোরেট ট্যাক্স। এছাড়া বিলগ্নিকরণ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার লাভ। এ কথা অনস্বীকার্য, সরকারের উপর বোঝা বাড়বে। বিশাল আর্থিক বোঝা। কারণ প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ সরকারি কর্মচারী এবং প্রায় একই সংখ্যক বা তার বেশি পেনশনভোগী রয়েছেন। অষ্টম বেতন কমিশনে বেতন এবং পেনশন মিলিয়ে বিরাট খরচ হবে। সপ্তম কমিশনে আর্থিক বোঝা ছিল প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। এবার সেটাই ছাড়িয়ে যেতে পারে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা।