Nistih Pramanik Udayan Guha: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের দাবিকেই মান্যতা দিল নির্বাচন কমিশন। উদয়ন গুহকে শুক্রবার নির্বাচনের দিন নিজের এলাকাতেই নজরবন্দি থাকতে হবে। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে অস্বস্তিতে দিনহাটার তৃণমূল ও বিধায়ক উদয়ন গুহ। কোচবিহারের প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া হলেও, আসল ভোট কৌশলী আসলে উদয়নই এটা জানতে বাকি নেই কারও। ফলে তাকে নজরবন্দি করলে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।এদিকে পাল্টা চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন উদয়ন।
কোচবিহারের ভোটে সারাক্ষণ নির্বাচন কমিশনের ‘নজরবন্দি’ থাকতে হবে তাঁকে। নোটিশ পাঠিয়ে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে। সেই নোটিশ অনুযায়ী, শুক্রবার অর্থাৎ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের দিন নিজের বুথের বাইরে যেতে পারবেন না উদয়ন। যদিও উদয়ন গুহর (Udayan Guha) দাবি, তিনি এখনও কমিশনের তরফে কোনও নোটিশ পাননি।
কী বললেন উদয়ন?
উদয়ন বলেন, "আমাকে নজরবন্দি করে রাখলে, অন্যদের বুথ দখল সহ নানা কাজ করতে সুবিধা হবে। তাই এই চক্রান্ত।" তাঁর দাবি, "আমি ঘরে থাকলে যদি গোলমাল না হয়, তাহলে ভাল। কিন্তু তারপরও যদি অশান্তি হয়, তার দায় কে নেবে?" প্রশ্ন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর। তাঁর দাবি, "আমাকে যদি বিধানসভার মধ্যে রেস্ট্রিক্ট করা হয়, তাহলে ওকে ভেটাগুড়িতে আটকে দেওয়া উচিত। বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া উচিত নয়। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য যদি উদয়ন গুহর মুভমেন্ট রেস্ট্রিক্ট করা হয়, তাহলে আরও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে যদি নিশীথকে ভেটাগুড়িতে আটকে রাখা হয়, এটা আমি গ্যারান্টি দিতে পারি।" তিনি পাশাপাশি বলেন, "কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুলিশ দিয়ে নিশীথের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হোক। তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে, কার কী উদ্দেশ্য।"
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম দফা লোকসভা ভোট (2024 Loksabha Election)। এদিন রাজ্যের কোচবিহার-সহ রাজ্যের তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। তার আগে বুধবার দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার আর্জি জানিয়ে কমিশনের কাছে চিঠি লিখে আবেদন জানান বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik)। ভোটের সময় নিজের বুথ এলাকার বাইরে যেন বেরোতে না পারেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, এই আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক। গত ১৫ তারিখ এই চিঠি কমিশনকে লিখেছেন নিশীথ। ভোটের দিন উদয়নকে তাঁর নিজের বুথে আবদ্ধ করে রাখার আর্জি জানিয়েছেন নিশীথ। পাশাপাশি, উদয়ন উস্কানি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন বিজেপি প্রার্থী।
চিঠিতে কী লিখেছেন নিশীথ?
নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে নিশীথ লিখেছেন, 'আপনারা জানেন যে, উদয়ন গুহ সমস্ত গুন্ডামির মূল হোতা। নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লাগু হওয়ার পরও প্রশাসনের অনুমতিক্রমে করা কর্মসূচিতে আমায় দু'বার আক্রমণ করেছেন।' এরপরেই নিশীথ উল্লেখ করেছেন যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে উদয়নের নাম ছিল। উদয়নের ঘৃণাভাষণের জন্য বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন নিশীথ। তৃণমূলে উদয়ন ঘৃণাভাষণের জন্য বিখ্যাত বলেও চিঠিতে লিখেছেন বিজেপি প্রার্থী।
এই কারণ দর্শানোর পরই কমিশনের কাছে নিশীথের আর্জি, সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোটের স্বার্থে উদয়নকে তাঁর বুথ এলাকার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হোক।
উদয়ন বনাম নিশীথ দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। লোকসভা ভোটের আবহে দু'জনের সংঘাত আরও চরমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি কোচবিহারে সভায় নিশীথকে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে নিশীথকে নিশানা করে মমতা বলেন, 'কাল ওঁর বড় হোম মিনিস্টার এসেছিল। এটা হল কুচোকাচা। চোর চোট্টা চিটিংবাজ।' তারপরে নাম না করে অমিত শাহকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, 'সে বুনিয়াদপুরকে বলছে বেলুরঘাট। সে নামটাও জানে না। বালুরঘাট বল না হয়। বুনিয়াদপুর আলাদা। গিয়ে বলছে, উল্টে ঝুলিয়ে রেখে দেব। একথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারেন। কী মিডিয়ার বন্ধুরা আপনারা তখন শুনতে পারেন না। আপনি কাকে বা কাদের ঝুলিয়ে রাখবেন। এত সোজা? এত তাড়াহুড়ো করবেন না। গেমটা এত সোজা নয়। প্রথমে নিজেরটা দেখুন। নিজের চেহারাটা দেখুন।'
ওই সভায় উদয়নকে পরামর্শ দিতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। উদয়নের উদ্দেশে মমতা বলেন, 'উদয়নকে বলব, বি কুল। কুল কুল তৃণমূল। ঠান্ডা মাথায় নির্বাচন করতে হবে। ও তোমাকে গন্ডগোলে জড়িয়ে বিএসএফকে দিয়ে ভোটটা করিয়ে নেবে। ভুলেও সেটা করতে দিয়ো না। আগে থেকে নিজেকে তৈরি রাখো।'