শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বুধবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রের বঞ্চনাকে হাতিয়ার করেই তৃণমূলের নির্বাচনী ইশতেহার সাজানো হয়েছে। তৃণমূলের এই ইশতেহারের নাম দেওয়া হয়েছে 'দিদির ১০ শপথ', যেখানে দৈনিক নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি থেকে বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার প্রদান, দুয়ারে রেশন, সবকিছুই রাখা হয়েছে।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই বর্ষীয়ান নেতা অমিত মিত্র স্পষ্ট করে দেন এই নির্বাচনী ইশতেহার আসলে 'দিদির শপথ'। দেশের মানুষকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে প্রতিশ্রুতি দেবেন তা পূরণ করার শপথ নিয়েছে তৃণমূল। ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন মাত্রই সব প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ইশতেহারে দেওয়া ১০ প্রতিশ্রুতি-
বর্ধিত আয়, শ্রমিকের সহায়
সমস্ত জবকার্ড হোল্ডারদের ১০০ দিনের গ্যারান্টি যুক্ত কাজ প্রদান করা হবে। দেশের সর্বত্র শ্রমিকদের বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি হবে দৈনিক ৪০০ টাকা।
দেশ জুড়ে বাড়ি, হবে সবারই
দেশের সকল দরিদ্র পরিবারের জন্য আবাসনের নিশ্চয়তা দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রত্যেককে নিরাপদ ও পাকা বাড়ি প্রদান করা হবে।
জ্বালানির জ্বালা কমবে, দেশের জ্বালা ঘুচবে
দেশে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলিকে বছরে ১০টি করে রান্নার গ্যাস বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অনেক হয়েছে শাসন, এবার দুয়ারে রেশন
প্রতি মাসে রেশন কার্ড হোল্ডারদের বিনামূল্যে ৫ কেজি রেশন দেওয়া হবে, তাতে থাকবে চাল, গম, শস্য। প্রত্যেক সুবিধাভোগীর বাড়ির দোরগোড়ায় বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া হবে এই রেশন।
আমাদের অঙ্গীকার, নিরাপত্তা বাড়বে সবার়
উচ্চশিক্ষা বৃত্তি বাড়ানো হবে প্রান্তীক পড়ুয়াদের কথা ভেবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবক, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য উচ্চশিক্ষা বৃত্তি বাড়ানো হবে। সারা দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সি দের জন্য বার্ধক্যভাতা বৃদ্ধি করে বার্ষিক ১২,০০০ টাকা করা হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে এই ভাতা মিলবে।
বর্ধিত আয় নিশ্চিত এবার - ফুটবে হাসি অন্নদাতার
স্বামীনাথান কমিশনের সুপারিশ অনুসারে কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের আইনগত গ্যারান্টি দেওয়া হবে। সমস্ত ফসলের উৎপাদনের গড় খরচের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ধার্য করা হবে।
স্বল্প মূল্যে পেট্রোপণ্য, ভারবর্ষে সকলে ধন্য
পেট্রোল, ডিজেল এবং LPG সিলিন্ডারের দাম সাশ্রয়ী মূল্যে সীমাবদ্ধ করা হবে। দামের ওঠানামা পরিচালনা করার জন্য প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড তৈরি করা হবে গোটা দেশে।
নিশ্চিন্ত ভবিষ্যৎ অর্জন, যুবশক্তির গর্জন
২৫ বছর পর্যন্ত সব স্নাতক এবং ডিপ্লোমা হোল্ডারকে দক্ষতা এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে এক বছরের শিক্ষানবিশ প্রতিশিক্ষণ প্রদান করা হবে। অর্থনৈতিক ভাবে নিজেদের সহায়তা করার জন্য মাসিক বৃত্তি প্রদান করা হবে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হবে।
স্বচ্ছ আইন, স্বাধীন ভারত
ধোঁয়াশাযুক্ত CAA আইন বিলুপ্ত করা হবে। বন্ধ করে দেওয়া হবে NRC। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ভারত জুড়ে প্রয়োগ করা হবে না।
এগিয়ে বাংলা, এগোবে ভারত
বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গোটা দেশে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১০০০ টাকা এবং এককালীন ২৫০০০ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের সব মহিলাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য বিমার পরিবর্তে উন্নততর স্বাস্থ্যসাথী বিমা চালু করা হবে দেশে, যা ১০ লক্ষ টাকার বিমার সুবিধা প্রদান করবে।
প্রসঙ্গত, ১০০ দিনের কাজের টাকা তো বটেই, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সারা দেশে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি থেকে বিনা মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষা, প্রতি মাসে পাঁচ কেজি চাল সবকিছুই রাখা হয়েছে এই ইশতেহারে। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি, সাঁওতালি (অলচিকি), নেপালি- এই ৬টি ভাষায় ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে।