চলবি বছর মে মাসের মাঝামাঝি দক্ষিণবঙ্গের বুকে আছড়ে পড়েছিল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফান। যার ফলে তছনছ হয়ে যায় গোটা সুন্দরবন। কলকাতাতেও ঝড়ের প্রভাব পড়েছিল মারাত্মক। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে স্বয়ং হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই আমফান ঘূর্ণিঝড়ের ত্রানেই উঠেছে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ।এবার সেই ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির মামলায় তদন্ত করবে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (CAG)। এমন নির্দেশই দিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তিন মাসের মধ্যে এই তদন্তের রিপোর্ট জমা করতে বলেছে।
মঙ্গলবার আদালত নির্দেশ দিয়েছে-
কারা আমফানের ত্রাণ পেয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে।
সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত ত্রাণ পেয়েছেন কি না তাও জানাতে হবে।
সেই সঙ্গে ত্রাণবণ্টনে দুর্নীতি হয়ে থাকলে এবং কোন সরকারি আধিকারিক সেজন্য দায়ী থাকলে তা খুঁজে বার করতে হবে।
সেই সমস্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে আদালতকে তাও জানাতে হবে।
তবে হাইকোর্ট এও জানিয়েছে, তদন্তের কারণে ত্রাণ বন্টন প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না। ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়।মামলাকারীদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাণ বণ্টনে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে রাজ্য সরকার। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা পাননি। টাকা গিয়েছে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের কাছে।
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারকেও আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ক্যাগকে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে। তিন মাস পর মামলার পরবর্তী শুনানি। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণাণ এবং অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে হবে শুনানি। তার আগে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হবে ক্যাগ রিপোর্ট পেশ।
আমফানের পর দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে আপৎকালীন ১ হাজার কোটি টাকা ত্রাণ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের করা আবেদনের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয় ত্রাণ। কোনও বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যদিও অভিযোগ ওঠে , আমফানের ত্রাণ বণ্টনে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে ত্রাণ ঢুকেছে তৃণমূল নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠদের পকেটে। এই নিয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। তার জেরে দুর্নীতি করে যারা ত্রাণ নিয়েছিলেন তাদের টাকা ফেরতের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও আদালতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুর্গতদের প্রত্যেককে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই ছিল সরকারের লক্ষ্য। যাঁরাই আবেদন করেছেন, তাঁদের সাহায্য করা হয়েছে।এই মামলায় রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিতে বলেছে হাইকোর্ট।