এই পৃথিবীতে কোনও কিছুই এমনি এমনি হয় না। প্রতিটি ঘটনার নেপথ্যে একটা যুক্তি থাকে। যখন সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টকেট পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মন্ত্রীদের ঘরে গিয়ে তল্লাশি শুরু করছে তখন অধীর চৌধুরী কিন্তু সিবিআই বা এনফোর্সমেন্টের রাজনৈতিক অপব্যবহার হচ্ছে বলে সোচ্চার হন না। আসলে কোনটাতে রাজনৈতিক নেতারা মুখ খুলবেন আর কোনটাতে মুখ খুলবেন না এরও একটা ব্যাকরণ থাকে।
আদনির বিরুদ্ধে মহুয়া মৈত্র যেটি করেছেন সেই ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসেরই বহু নেতার ধারণা যে, এতে রাহুল গান্ধীর সমর্থন আছে। এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মহুয়া মৈত্রের একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। রাহুল গান্ধী নিজেই আদানির বিরূদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন মুম্বই শহরে ঠিক ইন্ডিয়া বৈঠক হওয়ার মুখে। এমনকী ইন্ডিয়াকে দিয়ে একটা বিবৃতিও তৈরি করার পক্ষে ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিনও কিন্তু সেটার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হবেন, কোনওরকম ভাবে তার সাথে আপোস করবেন না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ভাবে সব তথ্য না জেনে একটা প্রেস কনফারেন্স করে ফেলা এইগুলো কোনও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নয়। এই কাজটি কিন্তু বিজেপি করছে। প্রমাণ ছাড়াই বিজেপি সব জায়গায় তদন্ত করাচ্ছে। সেই কাজটা তিনি সমর্থন করেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কারণে সেদিনও রাহুল গান্ধীর পাশে ছিলেন না।
মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে শশী থারুরের ঘনিষ্ট সম্পর্ক জানা যাচ্ছে। শশী থারুর নিজে তথ্যপ্রযুক্তি সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। সেই শশী থারুর শুধু নয়, যারা যারা মহুয়া মৈত্রকে এই সমস্ত তথ্য জোগান দিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কংগ্রেসের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বভাবতই কংগ্রেসের একটা দায় থাকে বটে!
এই দিকে রাহুল গান্ধী কিন্তু মহুয়া মৈত্রের পক্ষে বিবৃতি দেননি। কিন্তু তাঁর একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে। তিনি প্রকাশ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন না। তাহলে আর মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের শেষ পেরেকটা ২০২৪-এর আগে ঠোকা হয়ে যায়। এমনিতেই ইন্ডিয়া- র অবস্থা কাহিল। নীতীশ কুমার পর্যন্ত বিজেপির সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তারপর আর ইন্ডিয়া -র কি হবে! কিন্তু অধীর চৌধুরীর বিবৃতিটা মনে করা হচ্ছে যে এটা হাই কম্যান্ড এর সমর্থন নিয়েই তিনি করেছেন। অর্থাৎ হাই কম্যান্ড রাহুল গান্ধী না করলেও অধীর চৌধুরীর পক্ষ থেকে একটা বিবৃতি দেওয়া রইল। এটা একটা রাজনৈতিক তাস।
অধীর চৌধুরী বলেছেন যে, খুব ছোট জিনিসকে খুব বড় করা হচ্ছে। মহুয়া মৈত্র যেটা করেছেন আদানির বিরূদ্ধে তার যৌক্তিকতা আছে। অধীর চৌধুরীর কণ্ঠস্বর রাহুল গান্ধীর কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি। সেখানে মহুয়া মৈত্রকে সমর্থন করাটা যেন তৃণমূলের থেকেও কংগ্রেসের বড় দায়। কার্যকারণ সম্পর্কটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আগামী দিনে মহুয়া মৈত্র কি তবে কংগ্রেসের পথেই হাঁটছেন?