
অপ্রতিরোধ্য, অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়... নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ বাঁচানো ইনিংসকে ভূষিত করা যেতে পারে এমনই নানা বিশেষণে। ক্রাইস্ট চার্চে আরও একবার প্রমাণ হল, সেই ক্লিশে বাক্যটির চিরন্তন সত্যতা- ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। নইলে কে ভাবতে পেরেছিল, দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৫৩১ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়েও ক্যারাবিয়ানরা বাঁচিয়ে দেবে এই ম্যাচ। টানা ১৬৩ ওভার ব্যাট করে এক অনন্য রেকর্ড গড়লেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। ম্যাচ ড্র হল বটে, তবে তা জয়ের থেকে যে কোনও অংশেই কম না বলে মানছেন বিশেষজ্ঞরাও। এমনকী একটা সময়ে আশা দেখা গিয়েছিল ম্যাচটা বোধ হয় জিতেই গেল ক্যারিবিয়ানরা।
তবে এই ড্র সহজ ছিল না। ক্রাইস্ট চার্চে নিউজিল্যান্ড প্রথম ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে রান করেছিল ২৩১। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৬৭ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাহিনী। দ্বিতীয় ইনিংসে রানের পাহাড় গড়েন কিউয়িরা। ৮ উইকেট হারিয়ে ৪৬৬ রান করে ইনিংসে দাঁড়ি টানেন তাঁরা। ক্যারিবিয়ানদের সামনে লক্ষ্য রাখা হয় ৫৩১ রানের। তখনও ম্যাচের বাকি দেড় দিন।
প্রথম ইনিংসে ইন্ডিজের ব্যাটিং দেখার পর আর তাঁদের নিয়ে আশা ছিল না কোনও ক্যারিবিয়ান ভক্তরও। কারণ তখনও খেলা বাকি আরও ১৬০ ওভারেরও বেশি। ফলে কিউয়িরা এই ম্যাচ হাসতে হাসতে জিতে যাবেন, এমন কথাই ছিল। কার্যত হচ্ছিলও তাই। মাত্র ৭২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে হারের গন্ধ পাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এরপরেই যেন ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন শাই হোপ ও জাস্টিন গ্রিভস। দু'জনে জুটি গড়ে করেন ১৯৬ রান। যদিও পঞ্চম দিনে ১৪০ রানে হোপ আউট হতেই আবার হারের আশঙ্কায় বুক দুরুদুরু করে ওঠে ক্যারিবিয়ান সমর্থকদের। কিন্তু এরপরেই অপ্রতিরোধ্য, অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় কাণ্ড!
বোলার কেমার রোচকে সঙ্গে নিয়েই ১৮০ রানের জুটি গড়েন গ্রিভস। ৩৮৮ বল খেলে তাঁর সংগ্রহে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক। আর পেস বোলার কেমার রোচও ২৩৩ বল খেলে করেন ৫৮ রান। তাঁদের এই জুটিতেই আটকে গেল নিউজিল্যান্ড। ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৫৭ রান করে ক্যারিবিয়ানরা। ফলে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ক্রিকেটে বর্তমানে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেও রাখেন না, সেই ইন্ডিজ বাহিনীই ছুঁড়ে দিল নয়া চ্যালেঞ্জ। 'ফিনিক্স' হয়েই কি দেখা দিচ্ছে ক্যারিবিয়ানরা?
ম্যাচে নয়া রেকর্ড গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন গ্রিভস। সব মিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা সপ্তম ক্রিকেটার তিনি। এছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড। এর আগে ১৯৩৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৫৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড। তবে সেটা ছিল টাইমলেস টেস্ট। অষ্টম দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল খেলা। ফলে সেই রেকর্ড ভাঙা কার্যত অসম্ভব। আধুনিক ক্রিকেটে ইন্ডিজরা যা করে দেখাল তা যে নজির, তাতে কোনও সন্দেহই নেই।