1942 August Martyr Siliguri: ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন (Quit India Movement)-এ শামিল হয়েছিল তখনকার ছোট্ট জনপদ শিলিগুড়ি। তার স্মৃতি হিসেবে শিলিগুড়িতে তৈরি করা আছে একটি শহীদ স্মারক স্তম্ভও।
যদিও খুব কম মানুষই আজ সেটা জানেন ও স্মরণ করেন। স্তম্ভ তৈরি করলেও বছরে একবার স্বাধীনতা দিবসের সময় ফুল আর স্যালুট করেই কাজ শেষ হয়ে যায় প্রশাসনের। তারপর আবার তা এক বছরের জন্য ঢাকা পড়ে যায়, সামনে বসে থাকা মাটির পাত্রের কারবারিদের পসরার আড়ালে।
১৯৪২ সালের ৯ অগাস্ট গান্ধীজি সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হলে দেশ জুড়ে নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে শামিল হন। আর সেই সময় ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়ে শিলিগুড়ির রাজনৈতিক আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গোটা দেশের সঙ্গে শিলিগুড়িতেও মানুষ আন্দোলনে যোগ দেন।
সেই আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবেই, ৯ সেপ্টেম্বর বিরাট মিছিল বের হলে শিলিগুড়ি থানার কাছেই গুলি চালায় ব্রিটিশ পুলিশ। ৫ জন শহিদ হন। সেই শহিদদের স্মরণে তৈরি করা হয় শহিদ বেদি। শিলিগুড়ি থানার ঠিক পাশেই ফ্লাইওভার যেখান থেকে শুরু হয়েছে তার ঠিক পাশেই এই স্তম্ভটি। বেদির মধ্যেই পসরা নিয়ে বসছে জবরদখলকারী হকাররা।
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বেশ ভালোভাবেই অংশ নিয়েছিল শিলিগুড়ি। আগস্ট মাসে শুরু হওয়া ভারত ছাড়ো আন্দোলন সেপ্টেম্বরে আরও ভয়ানক আকার নেয়। শিলিগুড়ির পুরানো মানুষদের স্মৃতিতে এখনও রয়ে গিয়েছে, ইংরেজ ভারত ছাড়ো’, ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ (Do Or Die) শ্লোগান দিতে দিতে ৯-সেপ্টেম্বর হাজারখানেক মানুষ শিলিগুড়ি শহরে মিছিল বের করেন।
তখন শিলিগুড়ির জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ হাজার। সেই মিছিলে সব ধর্মের মানুষ অংশ নেন। মিছিলের মূল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্রজেন বসু রায়চৌধুরীর কন্যা ও কালিদাসী সেনগুপ্ত। সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। সেই সময়ের মহকুমাশাসক ছিলেন কে কে ঘোষের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায়।
তাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পাঁচ যুবক। মৃতদের মধ্যে ছাবিলা সিং, মহাবীর সিং আর শঙ্কর সিং-এর নাম জানা যায়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন স্মরণে সেই স্থানে একটি শহিদ বেদি তৈরি করা হয়।
শিলিগুড়ি থানার গায়েই সেই শহিদ বেদি। পুরসভার পরিচালনায় তা রাখা হয়েছে। বেদির চারপাশে মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। সামনের ফুটপাথ দখল করে বসে থাকা হকারদের জিনিসই তাতে রাখা হয়। পুরসভা দেখে না। এর আগে অনেকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হলেও তাতে কোনও কাজ হয়নি।
জানা যায়, ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা যতদিন বেঁচেছিলেন, তাঁরা সকলে মিলে বেদির সামনে জড়ো হতেন।সেখানেই স্মৃতিচারণ করতেন। এখন আর তেমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রশাসনও আগ্রহী নয় তাই অবহেলাতেই পড়ে রয়েছে রক্ত-লড়াইয়ের সাক্ষ্য বহন করা ঐতিহাসিক শহীদ স্তম্ভ।
এবারও হয়তো স্বাধীনতা দিবসের দিন, ফুল দিয়ে পতাকা তোলা হবে। বেলা ঘুরতে না ঘুরতেই আবার মাটির পাত্রের বেসাতি নিয়ে বসে পড়বেন হকাররা। আবার এক বছরের জন্য বিস্মৃত হবে এই স্তম্ভ। তবে কিছু মানুষের মুখে মুখে স্মৃতিতে উচ্চারিত হবে শহিদদের নাম। এটুকুই পাওনা।