রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকেই দায়ি করছে রাজ্য সরকার। বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই বন্যা ম্যান মেড। ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা নিয়েও সরব হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে আজ ফের দুদিনের জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যাকবলিত হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুরের পর এবার তিনি সফর করছেন বর্ধমান, বাঁকুড়া ও বীরভূমে। সম্প্রতি ডিভিসির ছাড়া জলে এই জেলাগুলিতেও বানভাসি হয়েছেন মানুষ। ঠাঁই হয়েছে ত্রাণশিবিরে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ভেঙে পড়েছে বাড়ি।
ডিভিসি থেকে রাজ্যের প্রতিনিধি তুলে নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরকম এক পরিস্থিতিতে ডিভিসির বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের বিদ্যুত্ দফতরের প্রধান সচিব শান্তনু বসু। পাশাপাশি পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের সেচ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ারও। ফলে জোড়া ইস্তফায় ডিভিসির সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত নতুন রূপ নিল বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে আবার জল ছাড়াল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। সোমবার মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে মোট ৩৯ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। এর আগে রবিবার রাতে ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছে, মাইথন জলাধার থেকে ৩০ হাজার এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। রবিবার সকালে দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩০ হাজার কিউসেক এবং ২০ হাজার কিউসেক।
ডিভিসির ছাড়া এই জল দামোদর নদী অববাহিকা ধরে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলিতে পৌঁছবে। বন্যা পরিস্থিতির জেরে এখনও জলের তলায় হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানের বহু গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে ডিভিসির ছাড়া জল নিচু এলাকাগুলিকে নতুন করে প্লাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনিতে ঝাড়খণ্ডে নতুন করে আর বৃষ্টি হয়নি। আর সেই কারণেই ধাপে ধাপে জল ছাড়ার পরিমাণ কমানো হচ্ছে বলে ডিভিসি সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও হাওড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক এলাকাই জলমগ্ন। তবে বেশ কিছু এলাকা থেকে দ্রুত গতিতে নামছে জল। ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গা যেমন খানকুল, আরামবাগ সহ পাঁশকুড়া, ঘাটাল ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিগত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে। এই সবের মধ্যে আবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস। হাওয়া অফিস বলেছে, বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই সাগরে তৈরি হয়েছে জোড়া ঘূর্ণাবর্ত। আর এই দু’য়ের জেরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যার জেরে বুধ ও বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস। বুধে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া,পশ্চিম বর্ধমানেও। শুধু দক্ষিণ নয়, উত্তরবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে।