একমাসের উত্তরবঙ্গে সফর শেষ। অবশেষে কলকাতায় ফিরছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মঙ্গলবার ভোরেই ট্রেনে করে রওনা দেন তিনি। তার আগে সোমবার দার্জিলিং রাজভবনে একমাস পাহাড় সফরের পর্যালোচনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। সেখানেই ধনখড়ের অভিযোগ ছিল, রাজ্যপাল হিসাবে প্রথমবার তাঁর পাহাড় আগমন হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে কার্যত 'বয়কট' করেছে। সোমবার ঠিক যেখানে শেষ করেছিলেন ধনখড়, মঙ্গলবার যেন সেখান থেকেই তোপ দাগা শুরু করলেন রাজ্যপাল। এদিন মালদহ শহরে তাঁর ট্রেন থামতেই ঘিরে ধরেন সাংবাদিকদের দল। ট্রেনের দরজা দাঁড়িয়েই সেখান থেকে ফের রাজ্যপ্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণ নিয়ে সরব হন রাজ্যপাল। হুঁশিয়ারি দেন, আসন্ন বিধানসভা ভোট নিরপেক্ষ ভাবে করতে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে সবরকম প্রচেষ্টা তিনি চালিয়ে যাবেন।
উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দরবার করতে দিল্লি গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এর পরেই বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল ধনখড়কে। দার্জিলিং পৌঁছেও সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। প্রশাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বলেছিলেন, সরকারি কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মী নন। তিনি বা মুখ্যমন্ত্রী কেউই সংবিধানের ঊর্দ্ধে নন। ধনখড় বলেছিলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের কখনোই ভোলা উচিত নয় যে তারা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন না। গত একমাস এই নিয়ে বারবার প্রশাসনকে বিঁধতে দেখা গেছে রাজ্যপালকে। এমনকি এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিং-এর বিরুদ্ধে পুরনো মামলার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। যার জেরে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন। তবে সেই হুমকি থেকে যে তিনি একেবারেই ভীত নন তা আগেই বুঝিয়েছিলেন ধনখড়। এদিনও ট্রেনের ভেতরেই ফের একবার জ্ঞানবন্ত প্রসঙ্গ তোলেন। প্রশ্ন করেন রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থর কাজ নিয়েও।
মমতা সরকারের বিরুদ্ধে বারবার প্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণের অভিযোগ তোলা ধনখড় জানান, একমাস পাহাড় সফরে তিনি বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ধনখড়ের দাবি, এই সময়ের মধ্যে একাধিক জটিল বিষয় উন্মোচিত হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না। পাহাড়ের ১০০টি পঞ্চায়েতে গত দুই দশক ধরে গণতন্ত্র উধাও রয়েছে। জিটিএ অডিট না হওয়া নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি পাহাড়ে অশান্তির পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় সেজন্য প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিতেও দেখা যায় রাজ্যপালকে।
রাজ্য প্রশাসনে রাজনীতির প্রবেশ করলেও তৃণমূল স্তরের সরকারি কর্মীরা এখনও সৎভাবেই কাজ করতে চান। সরকারের চাপেই তাঁদের হাত-পা বাঁধা। এদিন এমন দাবিই করেন ধনখড়। তবে উঁচু স্তরের আমলাদের দিকে তোপ অব্যাহত রেখেছেন খনখড়। কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে রাজ্য নিজের ক্ষতি করছে বলেই মত দিয়েছেন রাজ্যপাল। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কিষান নিধি যোজনা ও আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে রাজ্যবাসীর বঞ্চিত হওয়ার প্রসঙ্গও টেনেছেন ধনখড়। তবে ভোটের আগে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এদিন এড়িয়েই গেছেন রাজ্যপাল।