গতকাল কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেটে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা উঠে এসেছে। কৃষি থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা থেকে মহিলা উন্নয়ন নিয়ে বাজেটে রয়েছে বহু চমক। তবে লাইমলাইট কেড়েছে কর ছাড় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বার্তা। ভোটের আগে মোদী সরকারের শেষ বাজেটে নির্মলা কী করবেন সেদিকেই নজর ছিল সকলের। প্রসঙ্গত, এ বছর এবং আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, কর্নাটক, মিজোরাম, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও তেলঙ্গানায় বিধানসভা ভোট হবে। যার প্রতিটিতেই বিপুল সংখ্যক আদিবাসী ভোটার রয়েছেন। যেদিকে তাকিয়ে বেশ কয়েকটি আদিবাসী উন্নয়নে ঢালাও প্রকল্প চালুর ঘোষণা করেন নির্মলা। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের মধ্যাঞ্চলে খরাকবলিত এলাকার জন্য ৫৩০০ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। তবে বাদ যায়নি বাংলাও। কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাংলার জন্যও।
বাজেট থেকে রাজ্যের প্রাপ্তি
ম্যানগ্রোভ বাড়াতে ‘মিষ্টি’ প্রকল্প
কেন্দ্রের বাজেটে উপস্থিত বাংলার মিষ্টি। অবাক হলেও একেবারেই সত্যি। বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নীর্মলা সীতরামন ঘোষণা করলেন MISHTI প্রকল্প। যেখানে উপকূলরেখা বরাবর ম্যানগ্রোভ বাগান করা হবে। এই নাম নেওয়া হয়েছে বাংলার মিষ্টি থেকেই। এই ঘোষণা আদতে বাংলারই জন্য বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ মিষ্টি (MISHTI) অর্থাৎ ‘ম্যানগ্রোভ ইনিশিয়েটিভ ফর শোরলাইন হ্যাবিট্যাটস অ্যান্ড ট্যানজিবল ইনকামস’ (Mangrove Initiative for Shoreline Habitats & Tangible Incomes) প্রকল্পে যে ম্যানগ্রোভ চাষের কথা বলা হয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সেই ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে এই বাংলার বুকেই, সুন্দরবনে।
বাংলার মেট্রো খাতে বরাদ্দ
চলতি বছরের বাজেটে এবার জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোর বরাদ্দ বেড়েছে। বাদ যায়নি নিউ গড়িয়া-দক্ষিণেশ্বর ও এয়ারপোর্ট-নিউ গড়িয়া মেট্রো প্রকল্পও। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বরাদ্দ অবশ্য অপরিবর্তিতই রয়েছে। শুধু ইস্ট-ওয়েস্ট নয়, নিউ গড়িয়া থেকে দক্ষিণেশ্বর ও এয়ারপোর্ট থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্তও মেট্রোর কাজ চলছে। সেই কাজে এবার গতি আনতে চাইছে কেন্দ্র। সঙ্গে জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোতেও। আগে নিউ গড়িয়া-দক্ষিণেশ্বর প্রকল্পে বারদ্দ ছিল ১৮৩৮ কোটি টাকা, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৪৫০ কোটি টাকা। এয়ারপোর্ট-নিউ গড়িয়া প্রকল্পে আগে বরাদ্দ ছিল ৯৩৪ কোটি টাকা, এখন তা করা হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত বাংলার জন্য বাজেটে সব থেকে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে মেট্রোরেল খাতে। মেট্রো রেলের জন্য ২৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। গত বাজেটে মেট্রোর জন্য বরাদ্দ ছিল ১৮৩৮ কোটি।
বাংলার আর যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ
বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প-সহ বাংলার একাধিক খাতে বহু কোটি বরাদ্দ হয়েছে চলতি অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে। এই বছরের বাজেটে বাংলার টেগোর কালচারাল কমপ্লেক্স-এর জন্য ৭.০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থমন্ত্রক। গতবার বরাদ্দ ছিল ১০ কোটি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩১.৩৪ কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের বাজেটে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৮.৭৭ কোটি টাকা। ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পের জন্যও গত বাজেটের থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৫.৯৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
বাংলার শিক্ষা- সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ
সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (SRFTI)-এর খাতে এই বাজেটে গত বাজেটের থেকে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। গত বাজেটে এসআরএফটিআই-এর জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৩ কোটি। এই বছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৩.১৬ কোটি। প্রায় দেড় কোটি বরাদ্দ বেড়েছে এশিয়াটিক সোসাইটির খাতে। হত বাজেটে এই টাকার পরিমাণ ছিল ২০ কোটি। কিন্তু এই বারে তা বাড়িয়ে ২১.৫০ কোটি করা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট এর খাতে গত বাজেটের তুলনায় ১৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। গত বাজেটে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি।
যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ কমল
পশ্চিমবঙ্গের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিয়োপ্যাথির জন্য এবছর বরাদ্দও কমানো হয়েছে বাজেটে । গত বাজেটে এনআইএইচ-এর জন্য বরাদ্দ ছিল ৮২.১৭ কোটি টাকা। ২০২৩-এর বাজেটে তা প্রায় চার গুণ কমিয়ে ২১.৯৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্রের ফুলপুর–হলদিয়া গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের খাতে গত বছরে মতো এই বছরেও কোনও টাকা বরাদ্দ করা হয়নি। । ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বরাদ্দও অপরিবর্তিত রাখা রয়েছে। পাশাপাশি ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়েও কোনও ঘোষণা নেই।