scorecardresearch
 

কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যু লেখক মুশতাকের, প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে শাহবাগ

আবারও প্রতিবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা। লেখকের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। এ সময় ব্যারিকেড অতিক্রম করতে চাইলে প্রতিবাদকারীদের উপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

Advertisement
আবারও প্রতিবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগ আবারও প্রতিবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগ
হাইলাইটস
  • ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেফতার করা হয়েছিল লেখক মুশতাক আহমেদকে
  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে
  • মুশতাকের মৃত্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলির

আবারও প্রতিবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগ।  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা।  লেখকের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। এ সময় ব্যারিকেড অতিক্রম করতে চাইলে প্রতিবাদকারীদের উপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে লেখক মুশতাক আহমেদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিপুলসংখ্যক জনতার অংশগ্রহণের এই জানাজা নামাজ রূপ নেয় প্রতিবাদ সমাবেশে। এই সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।

PHOTOS: 'খুলে দিতে হবে কলেজ ক্যাম্পাস', ঢাকার রাজপথ অবরুদ্ধ করল পড়ুয়ারা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৮টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক  মৃত বলে ঘোষণা করেন। লেখকের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। মুশতাক আহমেদ নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।  কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মুশতাক আহমেদ। প্রথমে তাঁকে কারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর  মুশতাক আহমেদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।  মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় ২০১৮ সালের  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছিল। ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে তিনি  কারাগারে বন্দি ছিলেন।

 

কাশিমপুর কারাগারেই মৃত্যু হল  লেখক মুশতাক আহমেদের
কাশিমপুর কারাগারেই মৃত্যু হল লেখক মুশতাক আহমেদের

মুশতাকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এদিন শাহবাগেও অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলির। লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশের পুলিশ জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে ঢাকার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, জাতির জনকের প্রতিকৃতি, জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এদিকে রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা মুশতাকের কীকরে মৃত্যু হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এই মৃত্যুর দায় সরকারেরও, এমন আওয়জাও তোলা হচ্ছে।  মুশতাক আহমেদ 'কুমির চাষের ডায়েরি' নামে বইয়ের লেখক, তিনি "মাইকেল কুমির ঠাকুর" নামে একটি ফেসবুক পাতাও পরিচালনা করতেন, যাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হত। তিনি বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। থাকতেন ঢাকার লালমাটিয়ায়। তার সঙ্গে স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মাও থাকতেন।

Advertisement

বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি আটকাতে ৩০টি দেশ সফর করেন ইন্দিরা, ভারতের 'প্রতিবেশী পাঠ' এখনও মনে রেখেছে বাংলাদেশ

আন্দোলনকারীরা অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এই ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে সমাবেশ থেকে ৩ মার্চ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন,  লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা প্রত্যেকে এর জন্য দায়ী। বিচারপতিরা যদি এই হত্যার দায় উন্মোচন না করেন, তাহলে তারাও এই হত্যায় দায়ী। বিচারপতিদের বলা উচিত এই আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, এই আইন কোনোক্রমেই থাকতে পারে না।” আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে রায় দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান জাফররুল্লাহ। তিনি বলেন, “বিচারপতিরদের আহ্বান করি, আপনারা এটাকে মৌলিক অধিকার হরণের রায় দিন। নতুবা আপনাদেরও একদিন পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে হবে। ডিজিটাল অ্যাক্ট দিয়ে সরকার টিকে থাকতে পারবে না।”

শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন প্রতিবাদীরা
শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন প্রতিবাদীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “মুশতাক তরুণদেরকে স্বপ্ন দেখাতেন। এই স্বপ্ন দেখানো মানুষটার স্বপ্নকে শুধু হত্যা করা হয়নি, এই মানুষটাকেও আজকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে দায়ী করছি। মুশতাক হত্যার জন্য, কার্টুনিস্ট কিশোরের জেলে থাকার জন্য যারা এই আইন তৈরি করেছে, যারা প্রয়োগ করছে তারা সকলেই দায়ী।” এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, কী কারণে কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু হল তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই জানা যাবে।

এদিকে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে তার হত্যার বিচারের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ অবরোধ প্রত্যাহার করেছে গতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। দাবি আদায়ে তারা শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় মশাল মিছিল করেন। লেখক মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টি আগামী সোমবারের মধ্যে পরিষ্কার না করলে আগামী সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবেন বলে তারা জানিয়েছেন।  বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় এই প্রতিবাদী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 

Advertisement
Advertisement