scorecardresearch
 

মোদীর ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে শিরোনামে, অবশেষে শ্রীঘরে মামুনুল

তেজগাঁও থানা কমপ্লেক্সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিন বিয়ের কথাও স্বীকার করছেন মামুনুল হক। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম বিয়ের পর যে দুই নারীর কথা আলোচনায় এসেছে তারা দু’জনই তার স্ত্রী। এসব বিয়ে তিনি সামাজিকভাবে গোপন রেখেছেন।

Advertisement
মামুনুল হককে  সাত দিনের পুলিশ হেফাজত দিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মামুনুল হককে সাত দিনের পুলিশ হেফাজত দিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম
হাইলাইটস
  • মামুনুল হককে সাত দিনের পুলিশ হেফাজত দিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম
  • রবিবারই ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়
  • জানা যাচ্ছে জেরায় পুলিশের কাছে তিন বিয়ের কথা স্বীকার মামুনুলের

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনের ডাক দেওয়া সেই কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  গত রবিবার বেলা ১টার দিকে তাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ। মামুনুল ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, “২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানার একটি নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “হেফাজতের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা, থানায় হামলা, রেজিস্ট্রার অফিসে হামলা, ভাঙচুরসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে। এসব মামলারও তদন্ত চলছে।”

কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে রবিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতারের পর তেজগাঁওয়ের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল, পাশাপাশি ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর-নাশকতার মামলারও তদন্ত চলছিল। তদন্তে ওই ঘটনায় সুস্পষ্ট যোগের  প্রমাণ পেয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।” গতবছরের নভেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে শিরোণামে আসেন মামুনুল হক। এরপর ভাস্কর্যের নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ডিসেম্বরে কুষ্টিয়া শহরে বঙ্গবন্ধুর একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ভাঙচুর চালানো হয়। ভাস্কর্য বিরোধিতা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। এ বছর মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় হেফাজত। এর মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় সংঘাত-নাশকতার ঘটনায় মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এরপর গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে এক নারীসহ আটক হয়ে আবারও আলোচনায় আসেন হেফাজতের এই নেতা, যাকে তিনি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছেন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মোদীবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই তাণ্ডবের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নেপথ্যে ছিলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মোদীবিরোধী বিক্ষোভের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে একাধিক মামলা করলেও তাতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নাম ছিল না। তবে ৩ এপ্রিল এক নারী সঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে স্থানীয় জনতার হাতে আটক হওয়ার পর হেফাজতকে কোণঠাসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানায় নতুন করে হওয়া একাধিক মামলায় মামুনুল হকসহ হেফাজতের একাধিক শীর্ষ নেতাকে আসামি করা হয়।

সোমবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সাত দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেনআদালত। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে  সোমবার বাংলাদেশের সময় বেলা সোয়া ১১টার দিকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাঁকে আদালতে আনা হয়। জানা যাচ্ছে, তেজগাঁও থানা কমপ্লেক্সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিন বিয়ের কথাও স্বীকার করছেন মামুনুল হক। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম বিয়ের পর যে দুই নারীর কথা আলোচনায় এসেছে তারা দু’জনই তার স্ত্রী। এসব বিয়ে তিনি সামাজিকভাবে গোপন রেখেছেন। 

প্রসঙ্গত, এর আগে হেফাজতের প্রায় ৮ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত ১১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহ-সভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) মাওলানা যুবায়ের আহমেদ ও শনিবার (১৭ এপ্রিল) মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ নামে হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

Advertisement