আচমকাই রাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করল কেন্দ্র সরকার। একাধিক দলের রেপার্টরি অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। আর সেই অনুদান বন্ধ করার পিছনে অযৌক্তিক কারণ দেখানো হচ্ছে বলেই মত নাট্য ব্যক্তিত্বদের একাংশের। ১ অগাস্ট সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। অনুদান বন্ধ হওয়া থিয়েটার দলগুলির মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় নাট্য ব্যক্তিত্ব ও পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দল সংসৃতি-র অনুদানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর তাই নিয়েই bangla.aajtak.in-কে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন।
দেবেশ চট্টেপাধ্যায় বলেন, 'এটা ঠিক হঠাৎ করে করা হয়নি। আমাদের গত ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের গুরু-শিষ্য পরম্পরা গ্রান্টের মিটিং দিল্লিতে ছিল। এই মিটিংয়ে আমরা গিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম যে কিছু একটা হতে চলেছে, যেটা ঠিক নয়। কারণটা হচ্ছে যে কিছু দলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, সেই দলগুলিকে তালিকাভুক্ত করে তাদের বাদ দেওয়ার একটা কথাও শোনা যাচ্ছিল। পরবর্তীকালে লোকসভা ভোটের আগে যেমন প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয় নাটকের ওপর এবং আমরা যাতে কোনও শো না করি ইত্যাদি নানান চেষ্টার পর অবশেষে ১ অগাস্ট যে তালিকা পাই তাতে বেছে বেছে দলগুলিকে বাদ দেওয়া হয়, তাই সবটাই যদি আমরা একসঙ্গে মেলাই তাহলে বুঝতে পারব যে দুটো জিনিস আছে। একটা হচ্ছে যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত অসূয়া। এখানকার যারা বিজেপির কিছু মানুষের একদম ব্যক্তিগত অসূয়া ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এরা কিছু দলকে বেছে নিয়েছে। ফলে তারা যে কারণগুলো দেখিয়েছেন সেগুলি অযৌক্তিক। বিভিন্ন দলকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছে। আসলে এদের কোনও নীতি নেই, যে কারণ দেখিয়ে আমি বাদ হতে পারি সেই একই কারণে অন্য অনেকেই বাদ হতে পারে। ফলে যুক্তি দেখিয়েও যে এটা করে উঠতে পেরেছে তা নয়। পুরো বিষয়টি অযৌক্তিক ও হাস্যকরভাবে কিছু দলকে অনুদান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, গত ১২ বছর ধরে সরকারি অনুদান পেয়ে আসছিল সংসৃতি। এ বার তাঁর দলের ১৭ জনের অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'এর পিছনে আরও একটা বিষয় কাজ করছে যে কোনও একটা ক্ষমতার ব্যাপার বা আস্ফালন বা ভয় দেখানো, তুমি যদি আমার বিরুদ্ধে কথা বল এবং আমার কন্ঠের সঙ্গে কন্ঠ না মেলাও, তাহলে আমরা যে কোনও মুহূর্তে তোমার যে সরকারি অনুদান তা বন্ধ করে দিতে পারি। অনেক ছেলেমেয়েরাই এই থিয়েটারের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। কোথাও একটা সংস্কৃতির আগ্রাসনও কাজ করছে, যেখানে ভয় দেখিয়ে অর্থ অনুদান বন্ধ করতে চেয়েছে। আমার বক্তব্য এই পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হল, মোদীজির সবকা সাথ সবকা বিকাশ, তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে কি বাংলার ক্ষেত্রে নিয়মটা আলাদা করছেন, নিশ্চয়ই নয়। তাহলে এখানে কিছু মানুষের বিকাশ কেন হচ্ছে না আর সত্যি সত্যি যদি এখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ব্যক্তিগত অসূহা হয়ে থাকে, তাহলে সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব এখন এই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের।' তিনি জানান, শমীক ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের থিয়েটারের দর্শক। রুদ্রনীল ঘোষ, যিনি আমার দলে অভিনয় করেছেন এবং ভাল বন্ধুও তাঁর, এঁরা দুজনেই এখন বিজেপির সঙ্গে যুক্ত এবং যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁরা আছেন, তাঁদেরকে বলব এই বিষয়টি দেখার জন্য। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'একটা অ্যাসাইন কমিটি তৈরি করুন এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গে যতটা দ্রুত সম্ভব বসুন এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে কে বা কারা এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে, তারা নিশ্চয়ই বিজেপির সেরকম জায়গা থেকেই এই খবরটা পাঠিয়েছে, তাদের সনাক্ত করা হোক। এটা সামগ্রিকভাবে বিজেপিরই ক্ষতি হচ্ছে। যে সাংস্কৃতিক জায়গাটা তৈরি করতে চাইছে সেটা এরকম করলে এমনিই নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং এটা বিজেপিরই দায়িত্ব সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে পুর্নমুল্যায়ন করে এটাকে পুর্ননবীকরণ করা।'
ঠিক কতজনের অনুদান বন্ধ করা হয়েছে? সংসৃতির কর্ণধার বলেন, 'আপাতত আমাদের যা হিসাব পাওয়া যাচ্ছে ২৬টা।' তিনি আরও বলেন, 'সারা পৃথিবী জুড়ে থিয়েটার একটা মাইনোরিটি আর্ট, থিয়েটার দলগুলিকে সরকার একটা জায়গা থেকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে, এটা পুরো পৃথিবীর নিয়ম। এটা যে শুধু বিজেপি সরকার চালু করেছে তা নয় এটা শুরু হয়েছে ভারতবর্ষে সেই নেহেরুর আমল থেকে। এই শিল্পকে সাহায্য করার জন্য সরকার অনুদান দেয়, এটা ভিক্ষা নয়। যাতে এই মাইনোরিটি সংস্কৃতি এগিয়ে যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে এই অনুদানের ওপর নির্ভর করে অনেক থিয়েটার কর্মী সংসার চালায়, তাদের ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের ওপর ভয়ঙ্কর কোপ পড়বে।'
প্রসঙ্গত, এতদিন নাটক বা অন্য সাংস্কৃতিক দলের গুরু (প্রধান) মাসিক ১০ হাজার টাকা পেতেন। সেটা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আবার শিষ্যদের (সদস্য) জন্য মাসিক অনুদান দুই হাজার থেকে বেড়ে ১০ হাজার টাকা হয়েছে।