সাহিত্য আজতক কলকাতা-র শেষদিনে এসে মঞ্চে হিন্দি ভাষা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হলেন লেখিকা ও বিশিষ্ট অনুবাদক সত্য উপাধ্যায়। রবিবারই ছিল সাহিত্য আজতক-এর দ্বিতীয় ও শেষদিন। আর এদিন অনুবাদের প্রয়োজন রয়েছে কিনা এই বিষয়ে আলোচনা করতে মঞ্চে উপস্থিত হন লেখিকা ও অনুবাদক মধু কাপুর ও সত্য উপাধ্যায়। আর শহর কলকাতার বুকে বসেই সত্য উপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন দেশের রাষ্ট্রভাষা হিন্দিকে যোগ্য সম্মান দেওয়া উচিত।
অনুবাদের প্রয়োজন রয়েছে কিনা এই আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে দুই লেখিকাকেই জিজ্ঞেস করা হয় যে নতুন প্রজন্মকে ঠিক কতগুলি ভাষা শিখে রাখা দরকার? এ প্রসঙ্গে মধু কাপুর জানান যে ভাষা শেখার কোনও সীমা নেই। যে যতটা সক্ষম সে ততগুলো ভাষা শিখে রাখতে পারে। অনেকে এমনও রয়েছে যারা ২৫-২৬টা ভাষা একসঙ্গে জানে। যদিও এই বিষয়ে বিপরীত মত পোষণ করেন সত্য উপাধ্যায়। তিনি জানান যে একজনের জন্য ধর্ম, জাতি ও ক্ষেত্র বিশেষে চারটে ভাষা শিখে রাখা খুবই প্রয়োজন। মাতৃভাষা, আঞ্চলিক ভাষা, হিন্দি ও ইংরাজি। এরপরই সত্য উপাধ্যায় বলেন, সবার প্রথমে তাকে হিন্দি শিখতে হবে। কারণ হিন্দি রাজকীয় ও শাস্ত্রীয় ভাষা। যদি আপনি হিন্দি শিখে নেন তাহলে পুরো বিশ্বে আপনি কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।
এরপরই সত্য উপাধ্যায় বলেন, আমি এই আজতকের মঞ্চ থেকে এটা বলতে চাই, যাতে এটা দূর পর্যন্ত যায়, যে আমাদের আজও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরাজিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আর ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি ২০২০-তে কোথাও হিন্দি ভাষার কোনও জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়নি। এটা কেন হল, কী জন্য হল জানিনা। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও আমরা ভাষার দাসত্ব করে চলেছি তখন বড় বড় কথা কীভাবে বলা যায়। আমরা ইংরাজিকে মান্যতা দিতে পারি কিন্তু যখন হিন্দিকে মান্যতা দেওয়ার কথা আসে তখন আমাদের আঞ্চলিক ভাবাবেগ, প্রান্তীয় আবেগ কেন সামনে চলে আসে? সত্য উপাধ্যায় আরও বলেন, আমাদের মাতৃভাষা, আঞ্চলিক ভাষা সীমিত। এই পুরো বিশ্বের ২০টি ভাষার মধ্যে ভারতের ৬টি ভাষা রয়েছে। যেখানে হিন্দি রয়েছে ৩ নম্বরে, বাংলা রয়েছে ৬ নম্বরে, উর্দু ১১ নম্বরে, মারাঠি ১৫ নম্বরে, তেলেগু ১৬ নম্বরে ও তামিল ১৯ নম্বরে। গোটা বিশ্বে হিন্দি ভাষার স্থান ৩ নম্বরে। তাই আমাদের দেশের শিক্ষার মাধ্যমের ভাষা আমাদের নিজস্ব রাষ্ট্রভাষা হিন্দি হওয়া দরকার।
আলোচনায় মধু কাপুর এও জানিয়েছেন যে গুগল ট্রান্সলেট কোনও ভাষা বা বিষয়ের আবেগ ও গুরুত্বকে বুঝতে পারে না। তাই অনুবাদের জন্য মেশিনের তুলনায় মানুষই শ্রেষ্ঠ। সঙ্গে তিনি এও জানান যে অনুবাদের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রকে ভাল করে বোঝার দরকার হলে নিজের ভাষায় তার বই থাকা খুবই প্রয়োজন। নয়তো জ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়।