scorecardresearch
 

Darjeeling Tourism: পাহাড় ও ডুয়ার্সে করোনার প্রভাব! প্রমাদ গুণছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা

২০২০-র ধাক্কা সামলে ২০২১-শে ফের নতুন করে যখন পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই আবার দ্বিতীয় ঢেউ সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল সেখানকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে।

Advertisement
দার্জিলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দার্জিলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
হাইলাইটস
  • ২০০৭ সালের পর থেকে পাহাড়ে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে ধাক্কা খেয়েছে পর্যটন
  • দার্জিলিং, কালিম্পং থেকে তরাই ও ডুয়ার্স, এমনকি পরশি রাজ্য সিকিমও এই সমস্যা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারেনি
  • যে পাহাড়কে ভালবেসে বছরের পর বছর ধরে দেশি, বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকতো, সেখানে গত ১ দশরের বেশি সময় ধরে কোথাও গিয়ে একটা ভাঁটার টান

সিকিম (Sikkim) ও উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি (Siliguri) সহ গোটা পাহাড় (Darjeeling), তরাই ও ডুয়ার্স (Dooars) এখন করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (Delta Variant) আতঙ্কে কাঁবু। ইতিমধ্যেই কালিম্পং (Kalimpong) সহ পাহাড়ের একাধিক জায়গাকে 'হাই রিস্ক' ও 'রিস্ক' জ়োন হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বুধবার কালিম্পংয়ের জেলা শাসক আর বিমলা এই বিষয়টি নিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করেন। এরপরই আশঙ্কার মেঘ দেখতে শুরু করেছেন সেখানকার বাসিন্দা থেকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। গত বছরের মতো এবারও তাঁরা সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন। 

পাহাড়ের পরিস্থিতি

পাহাড়ে মোর্চার (Gorkha Janmukti Morcha) আবির্ভাব-

২০০৭ সালের পর থেকে পাহাড়ে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে ধাক্কা খেয়েছে পর্যটন। দার্জিলিং, কালিম্পং থেকে তরাই ও ডুয়ার্স, এমনকি পরশি রাজ্য সিকিমও এই সমস্যা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারেনি। যে পাহাড়কে ভালবেসে বছরের পর বছর ধরে দেশি, বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকতো, সেখানে গত ১ দশরের বেশি সময় ধরে কোথাও গিয়ে একটা ভাঁটার টান। ভারতে আসা পর্যটকদের অনেকেই এখন দক্ষিণমুখী। কারণ সেখানে অনেকটাই এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত। 

মোর্চার আন্দোলন

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল-

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে হাত ধরে পাহাড় ও ডুয়ার্সে কিছুটা শান্তি ফেরে। তবে, পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে তা অনেকটা সুপ্ত আগ্নেয়গীরির মতো। যদিও, পর্যটকরা সেখানে শান্তি ফিরেছে বলে মনে করে কিছুটা ভিড় জমাতে শুরু করেন।  ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে এরাজ্যে বিজেপি কিছুটা মাথাচারা দিয়ে ওঠে। আর সেই সময় থেকেই পাহাড়ে কার্যত রাজনৈতিক ছন্দপতনের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির আনুকূল্যে পাহাড়ে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইডিং লাইন তৈরি হয়ে যায়। মোর্চার নেতৃত্বকে নিয়ে দড়ি টানাটানিতে যখন ব্যস্ত বিজেপি (BJP) ও তৃণমূল (TMC), তখন অশান্তির ভয়ে নতুন আবারও পাহাড় বিমুখ হতে শুরু করেন পর্যটকরা। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির মাথাচারা দিয়ে ওঠার আশঙ্কায় ২০১৭ সালে মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী। দার্জিলিং শহর ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে চলে যান মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং সহ একাধিক নেতা। তাঁদের খোঁজ করতে নেমে পাতলেবাসের কাছে টাকভরে ১৩ অক্টোবর প্রাণ হারাতে হয় রাজ্য পুলিশের সাব-ইনসপেক্টর অমিতাভ মালিককে। আহত হন আরও কয়েকজন। বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে UAPA ধারায় মামলাও রুজু করা হয়। 

Advertisement
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় বিভাজন-

সেই সময়, তৃণমূল-বিজেপি দড়ি টানাটানির বদলে পাহাড়ে দেখা দিল এক অন্য সমীকরণ। বিভক্ত হয় গেল মোর্চা নেতৃত্ব। একদিকে ফেরার বিমল গুরুংয়ের দলে রোশন গিরি সহ বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব আদি মোর্চাতেই থেকে গেলেন। অন্যদিকে, বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বে অনিত থাপা সহ দলের একটা বড় অংশ গঠন করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-২। এই চ্যাপ্টার ২কে নিয়েই শুরু হল পাহাড়ে মমতার শান্তি খোঁজার কাজ। কিছুটা ফিরছিলও। পর্যটকরা যখন আবার নতুন করে পাহাড়মুখী হতে শুরু করেছিলেন, ঠিক তখনই থাবা বসাল এই মারণ ব্যধি। ২০২০ সালের শুরু থেকেই পাহাড় ফের খালি হতে শুরু করে। করোনার প্রকোপ যতই বেড়েছে ততই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। 

বিমল গুরুং

পর্যটনে করোনার প্রভাব-

২০২০-র ধাক্কা সামলে ২০২১-শে ফের নতুন করে যখন পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই আবার দ্বিতীয় ঢেউ সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল সেখানকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে। ইতিমধ্যেই গত কয়েকদিনে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং সহ ডুয়ার্সে ডেল্টা ভ্যারিয়েস্টের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রসঙ্গত গতকাল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৫ জনের পরীক্ষার নমুনার রিপোর্ট আসে। রিপোর্টে তাঁদের শরীরে ডেল্টা ভেরিয়ান্ট ও UK স্ট্রেনের হদিস মেলে। যার মধ্যে একজন কালিম্পঙের বাসিন্দা। বাকিরা শিলিগুড়ি সংলগ্ন এলাকার। যদিও, এই পাঁচ আক্রান্তের নমুনা ৩ মাস আগে সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তাঁরা সকলেই সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। 

পাহাড়ে টয়ট্রেন

প্রশাসনের সতর্কতা-

তবে, নতুন করে সংক্রমণ ঠেকাতে আগে ভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের এই ঘোষণা হওয়া মাত্রই কালিম্পংয়ের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তরফ মাইকিং করে এলাকাবাসীদের সতর্ক করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিম্পং জেলার গরুবাথান ব্লকের আহালে, ডালিম ও গরুবাথান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতকে হাই রিস্ক জোন ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, কালিম্পং ১ ব্লকের ভালুখুপ, তিস্তা বাজার ও কালিম্পং ২ ব্লকের সান্টুক গ্রাম পঞ্চায়েতকেও হাই রিস্ক জোন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীতে প্রয়োজনে হাই রিস্ক জোনের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। প্রসঙ্গত, কালিম্পং থেকে সিকিমে পর্যটক, সাধারণ মানুষ সহ পাহাড়বাসীর আনাগোনা লেগে থাকে। যার ফলে ওই জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা ফের বাড়ার আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। নাইট কার্ফু নিয়ে কড়াকড়ি থাকলেও জেলাতে যাতে সংক্রমণ কোনওভাবে বৃদ্ধি না পায় তার জন্য ওই উদ্যোগ বলে জানান জেলা আধিকারিকরা।পাশাপাশি করোনা বিধি যাতে কড়াভাবে লাগু করা হয় তারজন্য পুলিশকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক আরবিমলা। পাশাপাশি ওইসব এলাকায় করোনা বিধি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার হরেকৃষ্ণ পাঁই।

Advertisement
মিরিক লেক

প্রমাদ গুণছেন ব্যবসায়ীরা-

তবে, নতুন করে এই আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় আগামী পর্যটন মরশুম নিয়ে ফের আশঙ্কায় পর্যটক ব্যবসায়ীরা। উত্তরবঙ্গে অন্যতম পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট স্যান্যাল বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে ব্যবসা, তাতে আগামীদিনে এই পেশার সঙ্গে যুক্তদের রোজগারের পথ পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমানে কয়েকহাজার মানুষ উত্তরবঙ্গজুড়ে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মূলত, এই এলাকার ৫০ শতাংশ অর্থনৈতিক পরিকাঠামোই নির্ভর করে রয়েছে পর্যটনের ওপর। 

 

Advertisement