scorecardresearch
 

জাগুয়ার দুর্ঘটনা: আত্মসমর্পণ আরসালান কর্ণধার পুত্রের

সূত্রের খবর, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে পরপর তার জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় আজ তাকে আত্মসমর্পণ করতেই হতো। আদালতের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার দুপুরে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী এবং ছোটো ভাই আরসালান পারভেজকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে হাজির হয় রাঘিব পারভেজ। তারপর সে আত্মসমর্পণ করে।

Advertisement
চলছে শুনানি চলছে শুনানি
হাইলাইটস
  • জাগুয়ার দুর্ঘটনাকাণ্ডে আদালতে আত্মসমর্পণ রাঘিব পারভেজের
  • তাকে ১৭ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত
  • সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে রাঘিব

ভয়াবহ জাগুয়ার দুর্ঘটনাকাণ্ডে অবশেষে আদালতে কাছে আত্মসমর্পণ করল বিখ্যাত আরসালান বিরিয়ানির কর্ণধারের পুত্র রাঘিব পারভেজ। নিয়ম অনুযায়ী এদিন সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৭ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় নগর দায়রা আদালত। এছাড়াও তার চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারক। 

সূত্রের খবর, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে পরপর তার জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় আজ তাকে আত্মসমর্পণ করতেই হতো। আদালতের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার দুপুরে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী এবং ছোটো ভাই আরসালান পারভেজকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে হাজির হয় রাঘিব পারভেজ। তারপর সে আত্মসমর্পণ করে। 

আরও পড়ুন : বেসরকারি সংস্থার কর্মী থেকে কীভাবে BJP-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ?

 

দুর্ঘটনার দিন

বছর দুয়েক আগে অগাস্ট মাসে শিরোনামে উঠে আসে মধ্য কলকাতায় দুটি বিলাসবহুল গাড়ির দুর্ঘটনার খবর। ১৭ আগস্ট রাত ২ নাগাদ শেক্সপিয়ার সরণি এবং লাউডন স্ট্রিট ক্রসিংয়ের কাছে দ্রুত গতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছুটে এসে একটি মার্সিডিজ গাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে একটি জাগুয়ার গাড়ি। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে  সেই মার্সিডিজটি শেক্সপিয়ার সরণি থানার উল্টোদিকের একটি ট্রাফিক কিয়স্কে ধাক্কা মেরে, পরপর দুবার পালটি খেয়ে উলটে যায়। অন্যদিকে মধ্যরাতে অঝোরে বৃষ্টি পড়ায় ওই কিয়স্কটির পেছনে আশ্রয় নিয়েছিলেন কলকাতায় চিকিৎসা করতে আসা ৩ বাংলাদেশি নাগরিক। যাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয় এই দুর্ঘটনায়। জখম হন তৃতীয় ব্যক্তি। এছাড়াও গুরুতর জখম হন মার্সিডিজ গাড়িতে থাকা শহরের নামী ব্যবসায়ী অমিত কাজারিয়া এবং তাঁর স্ত্রী কনিকা কাজারিয়া।

পুলিশের তদন্ত ও  নাটকীয় মোড়

সাধারণ গাড়ি দুর্ঘটনা হলেও পুলিশি তদন্তে নাটকীয় মোড় নেয় অভিযুক্ত পরিবারের তৈরি একের পর এক রহস্যে মোড়া চিত্রনাট্যে। অভিযুক্তকে থানায় আত্মসমর্পণ করতে বলে বাড়িতে পুলিশ নোটিশ পাঠালে আর্সালান পরিবার থানায় হাজির করান তাঁদের ছোটো সন্তান আর্সালান পারভেজকে। দুর্ঘটনার সময় গাড়ির চালকের আসনে তিনিই ছিলেন বলে দাবি করে, পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে গ্রেপ্তার হন ছোটো ছেলে। তবে তদন্ত যত এগোতে থাকে, পুলিশের সন্দেহ ততই বাড়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতকে হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁর মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, তাঁর মুখে এবং কপালে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, জাগুয়ারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সামনে থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায় এয়ার ব্যাগ। এই এয়ারব্যাগ আচমকা খুললে চালক এবং তার পাশের আসনে বসা ব্যক্তির কপাল এবং মুখে সজোরে আঘাত লাগে। সেই আঘাতের চিহ্নকে বলা হয় 'সিলিকন বাইট' বা 'এয়ারব্যাগ স্ল্যাপ'। পুলিশ জানায়, সেই সিলিকন বাইটের কোনও দাগ ধৃতের মুখে এবং কপালে পাওয়া না যাওয়ায় তাঁর স্বীকারোক্তি নিয়ে সন্দেহ ক্রমেই বাড়তে থাকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোন্নগড়ে শিশুকে যৌন নির্যাতন, ধৃত প্রৌঢ়

আরসালান জাগুয়ার দুর্ঘটনা
আদালতে আত্মসমর্পণ জাগুয়ারকাণ্ডের মূল অভিযুক্তের

ইতিমধ্যেই এই তদন্তের দায়িত্ব নেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। তলব করা হয় ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং বিলাসবহুল গাড়িটির প্রস্তুতকারক সংস্থার বিশেষজ্ঞদেরও। এরপরই পুলিশের তদন্তকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয় গাড়িটিতে থাকা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। পুলিশ জানায়, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান জানান, ওই গাড়ির কন্ট্রোল প্যানেল থেকে একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। যে মোবাইল থেকে মিউজিক সিস্টেম সংযোগ করে গান চলছিল গাড়িতে। সেই নম্বর থেকে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল ফটো বার করে দেখা যায়, সে ধৃত আর্সালান পারভেজ নন, বরং ছবিটি তাঁর বড় দাদা রাঘিব পারভেজের। আর্সালান বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজও সেদিন রাত এগারোটা নাগাদ বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হতে দেখা যায় রাঘিবকেই। এরপরই লালবাজারের গোয়েন্দা কর্তারা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যান, দুর্ঘটনার সময় চালকের আসনে আরসালান নন, ছিলেন তাঁর দাদা রাঘিব। 

আরও পড়ুন: এবার স্থগিত UGC NET-২০২১, ঘোষণা কেন্দ্রের

অবশেষে লাগাতার পুলিশি চাপের মুখে নতি স্বীকার করে চারদিন পর দুবাই থেকে কলকাতা ফিরতে বাধ্য হন পলাতক রাঘিব পারভেজ। ২১ অগাস্ট কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। জানা যায়, দুর্ঘটনার পর দিন কিছুক্ষণ মামার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সে পালিয়ে গিয়েছিল দুবাইয়ের উদ্দেশে। অভিযুক্তকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয় তার মামা মহম্মদ হামজা নামে এক ব্যক্তিকেও। অবশেষে লাগাম পড়ে টানটান এই নাটকীয় গোয়েন্দা তদন্তে।

আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল রাঘিব

একমাস পরেই অভিযুক্ত তিন জনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট পেশ করে আদালতে। তবে গত বছর এপ্রিলে অতিমারির সময় মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন পায় ধৃত রাঘিব পারভেজ। যদিও গত সপ্তাহে তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে যায় আরসালান পরিবার। সেখানেও তাদের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে আরসালান পুত্র। এরপরই নিয়ম অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রধান বিচারক পার্থসারথি সেন তাকে ১৭ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। অভিযুক্তের আইনজীবী তার মকেল্লের মানসিক অসুস্থতার  দাবি করলে, জেল সুপারকে ধৃতের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement