বহরাইচে নেকড়েদের হামলা আবার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এ ধরনের হামলায় মানুষ নিহত হচ্ছে এবং এলাকা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যদিও উত্তরপ্রদেশে নেকড়ে হামলা নতুন কিছু নয়, ১৯৯৬ সালে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়, সুলতানপুর এবং জৌনপুরে ৩০টি শিশু নেকড়ের হানায় মারা গিয়েছিল। সেই আতঙ্ক এখন বহরাইচে ফের ফিরে এসেছে।
১৯৯৬ সালের নেকড়ে আক্রমণ:
ত্রিশ বছর আগে নেকড়ে আক্রমণের তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিখ্যাত বন্যপ্রাণী বিজ্ঞানী ওয়াই ভি ঝালা। তার সহযোগী দীনেশ কুমার শর্মার সাথে তিনি আক্রমণের স্থানগুলো পরিদর্শন করেন এবং ১৯৯৭ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যার নাম ছিল ‘পূর্ব উত্তরপ্রদেশের নেকড়েদের দ্বারা শিশু-উত্তোলন’। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আক্রমণকারী নেকড়ে ছিল একক।
নেকড়ে হামলার বিশেষত্ব:
১৯৯৬ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ব উত্তরপ্রদেশের তিনটি জেলা—প্রতাপগড়, সুলতানপুর, এবং জৌনপুরে নেকড়ে সন্ত্রাস চলছিল। প্রতি তিন দিনে একবার করে শিশুদের হত্যা করা হত। নেকড়ে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, তারা গ্রামের মাঝখান থেকে শিশুদের অপহরণ করতে শুরু করেছিল। তখন সোশ্যাল মিডিয়া বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছিল না, যা এই সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারত।
অভিনব গবেষণা:
ঝালা এবং শর্মা পুরো এলাকার বিস্তারিত তদন্ত করেন। তারা আক্রমণের স্থানগুলোতে নেকড়ের পায়ের ছাপ, আক্রমণের চিহ্ন এবং রক্তের দাগ খুঁজে পান। তাদের গবেষণা অনুসারে, এই আক্রমণ ছিল ভারতীয় নেকড়ের কাজ। নেকড়ে কোনো বন্য কুকুর বা হায়েনার কাজ ছিল না।
আক্রমণের প্যাটার্ন:
গবেষণায় দেখা যায় যে, আক্রমণগুলি শুধুমাত্র ১০০ থেকে ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে কেন্দ্রীভূত ছিল। যখন নেকড়েদের একটি দল হত্যা করার পর পালিয়ে যেত, তখন একক নেকড়ে নতুন এলাকায় শিকার করতে চলে আসত।
আলফা পুরুষের ভূমিকা:
এলাকার গবেষণায় নিশ্চিত হয় যে, আক্রমণগুলি একটি আলফা পুরুষ নেকড়ে দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল। এই নেকড়ে তার বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য মানুষের শিশুদের হত্যা করছিল। এ সময় গ্রামে একক পিতামাতার দ্বারা পালিত শিশুদের সংখ্যা বেশি ছিল, যা নেকড়েদের শিকারকে সহজ করে তুলেছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি:
বাহরাইচে বর্তমানে নেকড়ে হামলার ঘটনা নতুন করে সামনে এসেছে। প্রশাসন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সেই ১৯৯৬ সালের আতঙ্কের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।