প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হল। এ বছর পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে বাংলার 'গাছ দাদু' ওরফে দুখু মাঝিকে। পদ্ম সম্মান দেওয়া হচ্ছে দেশের প্রথম মহিলা মাহুত পার্বতী বড়ুয়া-সহ ৩৪ জনকে। বাংলা থেকে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন বীরভূমের ভাদু শিল্পী রতন কাহার, কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্রপাল, পুরুলিয়ায় ছৌ নাচের মুখোশ তৈরির কারিগর নেপালচন্দ্র সূত্রধরও।
পুরুলিয়ার সিন্দ্রি গ্রামের বাসিন্দা গাছ দাদু। জনজাতি পরিবেশবিদ হিসাবে গাছ দাদুর সুনাম রয়েছে। অনুর্বর জমিতে ৫ হাজারেরও বেশি কলা, আমের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। রোজ সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়িয়ে গাছ লাগান তিনি। বৃক্ষরোপণ নিয়ে মানুষকে সচেতন করাই তাঁর লক্ষ্য। 'রুকু মাটি দুখু মাঝি' তথ্যচিত্রেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। ১২ বছর বয়স থেকে সবুজায়নের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি। টাকার অভাবে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে গাছ নিয়ে তাঁর ভালবাসা চিরকাল অটুট থেকেছে।
অন্য দিকে, দেশের প্রথম মহিলা মাহুত হিসাবে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন অসমের ৬৭ বছরের পার্বতী বড়ুয়া। প্রাণী কল্যাণে সামাজিক কাজের স্বীকৃতি হিসাবে তাঁকে পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। মানব সমাজ এবং হাতির সংঘাতের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে সাহায্য করেছেন পার্বতী। মাহুত হিসাবে সাধারণত পুরুষরা কাজ করেন। সেখানে এক জন মহিলা হিসাবে মাহুত হয়ে তাক লাগিয়েছেন তিনি। বাবার কাছ থেকে এই কাজ শিখেছিলেন পার্বতী। মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে মাহুত হিসাবে কাজ করে চলেছেন তিনি। হাতির হাত থেকে বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন পার্বতী। এছাড়া আরও ৩৪ জনকে পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন আদিবাসী, মৃৎশিল্পী, লোকশিল্পীরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিদের পদ্ম সম্মান আলাদা নজর কেড়েছে।
অন্য দিকে, প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, 'প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে আমি আপনাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের প্রজাতন্ত্রের ৭৫তম বছর বিভিন্ন দিক থেকে দেশের যাত্রাপথে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। দেশ স্বাধীনতার ১০০ বছরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অমৃত কালের প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম করছে। এটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের কাল। প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের মূল্যবোধ এবং নীতিগুলি স্মরণ করার গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।' রাষ্ট্রপতি আরও বলেন,'১৪০ কোটিরও বেশি ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল চেতনায় একত্রিত হয়ে এক পরিবার হিসাবে বাস করে। এই বিশ্বের বৃহত্তম পরিবারের জন্য সহ-অবস্থানের চেতনা ভূগোল দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া বোঝা নয়। বরং একসঙ্গে আনন্দের প্রাকৃতি প্রবাহ। যার উদযাপন হয় গণতন্ত্র দিবসে।' রাম মন্দির নির্মাণের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে। তাঁর কথায়,'অযোধ্যায় শ্রী রামের জন্মস্থানে নির্মিত বিরাট মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান আমরা সবাই দেখেছি। ভবিষ্যতে যখন এই ঘটনাকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখা হবে, তখন ইতিহাসবিদরা মনে রাখবেন, ভারতীয় সভ্যতার ও ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে। এই ঘটনা (প্রাণ প্রতিষ্ঠা) যুগান্তকারী হিসেবেই আখ্যা পাবে।'