বুধবার এফআইআর দায়েরের পর মণিপুরে আরেকটি গণধর্ষণ ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ৩৭ বছর বয়সী একজন মহিলা অভিযোগ করেছেন যে, ৩ মে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হলে চুরাচাঁদপুরের বাড়ি থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে পালাচ্ছিলেন তিনি। প্রাণপণে ছুটছিলেন ওই মহিলা। সঙ্গে ছিলেন জা। তাঁর কোলেই ছিল এক শিশু সন্তান। কিন্তু রাস্তাতেই ঘিরে ধরে একদল মানুষ। তারাই তুলে নিয়ে যায় তাঁকে। এরপর পালা করে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ তাঁর। ধর্ষকরা কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত বলে দাবি তাঁর।
মণিপুরে দুই মহিলাকে গণধর্ষণ করে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। সেখানে একের পর এক গণধর্ষণ, যৌন হেনস্থা, নারকীয় নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে। এই ঘটনাটি ঘটেছিল সেই অভিশপ্ত ৩ মে-র রাতে। সেদিন থেকেই কুকি-মেইতেই সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভারতের উত্তর পূর্বের এই রাজ্য। নিগৃহীতা মহিলা বর্তমানে একটি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। দীর্ঘ ৩ মাস পর যাবতীয় ভয়, লজ্জা, সামাজিক সম্মানহানির আতঙ্ক কাটিয়ে বুধবার থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
নির্যাতিতা মহিলা জানিয়েছেন, সেদিন জাতিদাঙ্গা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের এবং পাড়া প্রতিবেশীদের বেশ কয়েকটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় শত্রুপক্ষের লোকজন। প্রাণভয়ে তিনি এবং তাঁর জা দৌড়াতে শুরু করেন। সঙ্গে ছিল দুজনের পাঁচ সন্তান। একসময় রাস্তাতেই তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এতটাই জোরে আঘাত পেয়েছিলেন যে চেষ্টা করেও উঠতে পারছিলেন না। তখনই জা-কে বলেন, তাঁর যা হয় হোক, বাচ্চাদের নিয়ে যেন পালিয়ে যান তিনি। তাঁর সেই অনুরোধ মেনেই শিশুগুলিকে নিয়ে এলাকা ছাড়েন তাঁর জা।
এদিকে তিনি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই শত্রুপক্ষের লোকজন ঘিরে ফেলেছিল তাঁকে। অন্তত ৫-৭ জনের একটি দল তাঁকে গণধর্ষণ করে বলে জানিয়েছেন নিগৃহীতা। ধর্ষণের পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর রাজধানী ইম্ফলে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস-এ চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন মহিলা। কিন্তু তখনও এই অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ব্যক্ত করার মতো মানসিক স্থিতি তৈরি হয়নি তাঁর। তাই ফিরে চলে আসেন। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছেন। লোক লজ্জার ভয় কাউকে কিছু বলে উঠতে পারেননি। চূড়াচাঁদপুরের বাসিন্দা সেই মহিলার এখন ঠাঁই হয়েছে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুরের একটি শরণার্থী শিবিরে। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ডি, ৩৫৪, ১২০বি এবং ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
দাঙ্গাবিধ্বস্ত মণিপুরে ৩মে থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৬,৫০০টি জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে বুধবার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে মণিপুর পুলিশ। জিরো এফআইআর যে কোনও থানায় দায়ের করা যায়, যে থানার অধীনস্থ জায়গায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই তা নথিভুক্ত করতে হবে এমনটা নয়। যে থানায় জিরো এফআইআর দায়ের করা হবে, সেই থানার তরফেই মামলার যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট থানার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।