scorecardresearch
 

মমতা চাইলেন মুসলিম ভোট! ইশারায় মোদীর মাস্টারস্ট্রোক

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের উত্তাপ যতই বাড়ছে তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিন্দু-মুসলমান ভোট ভাগের বিষয়টিও। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন দিন আগেই রায়দিঘির জনসভায় মুসলিম ভোটারদের বিজেপির ভয় দেখান। বলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বা আব্বাস সিদ্দিকীর দলের পরবর্তে ভোটটা তৃণমূলকেই দিতে। এবার মমতার মুসলিম কার্ডকে ভোতা করতে পাল্টা মাস্টারস্ট্রোক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement
সরাসরি কিছু না বলেও রাজনৈতিক বার্তা মোদীর গলায় সরাসরি কিছু না বলেও রাজনৈতিক বার্তা মোদীর গলায়
হাইলাইটস
  • রায়দিঘির সভায় মুসলিমদের বার্তা মমতার
  • তাই নিয়ে কোচবিহারে জবাব দিলেন মোদী
  • সরাসরি কিছু না বলেও রাজনৈতিক বার্তা মোদীর গলায়

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের উত্তাপ যতই বাড়ছে তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিন্দু-মুসলমান ভোট ভাগের বিষয়টিও। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন দিন আগেই রায়দিঘির জনসভায় মুসলিম ভোটারদের বিজেপির ভয় দেখান। বলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বা আব্বাস সিদ্দিকীর দলের পরবর্তে ভোটটা তৃণমূলকেই দিতে। এবার মমতার মুসলিম কার্ডকে ভোতা করতে পাল্টা মাস্টারস্ট্রোক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন কোচবিহারের জনসভা থেকে এবার ইশারায় হিন্দুভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিলেন মোদী। সেই সঙ্গে মমতার বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম রাজনীতি করার অভিযোগও তুললেন। 

মমতার ওপর মোদীর বাক্যবাণ
 কোচবিহারে নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানের নামে ভোট চাওয়ার ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুললেন মোদী। 
তিনি বলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যেই  মুসলিমদের থেকে  ভোট চাইতে হচ্ছে। কারণ মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক  আপনার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। তবে তৃণমূলনেত্রী এখনও নির্বাচন কমিশনের নোটিস পাননি। মোদী আরও বলেন, আমরা যদি বলতাম যে সমস্ত হিন্দু ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির পক্ষে ভোট দিক, তবে আমরা নির্বাচন কমিশনের নোটিস পেতাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন হলে নির্বাচন কমিশন আমাদের আট থেকে দশ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করে দিত। আমাদের চুলের মুঠি চেপে ধরা হোত। পুরো দেশের সংবাদমাধ্যম আমাদের বিরুদ্ধে হয়ে যেত। আমরা জানি না নির্বাচন কমিশন নোটিস পাঠিয়েছে কি না। তবে আপনি ... যাদের ভরসায় নির্বাচনের ময়দানে নেমেছেন এবং বাঁচাতে বলছেন  ... আমাকে বাঁচাও ... আমাকে বাঁচাও ...চিৎকার জুড়েছেন,  দিদি এর অর্থ আপনি নির্বাচন হেরে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর বড় রাজনৈতিক চাল
একদিকে নরেন্দ্র মোদী মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করছেন, অন্যদিকে জানিয়ে দিচ্ছেন হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করতে গেলে তাদের নির্বাচন কমিশন নোটিস ধরাতো।  এইভাবে, প্রধানমন্ত্রী মোদী কোনও কথা না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মাস্টারস্ট্রোক দিলেন। মোদী হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন না করেও  কিন্তু  রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে দিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যারা তিলক প্রয়োগ করেন, যারা গেরুয়া  পরেন তাদের সাথে দিদির সমস্যা আছে। মোদীর কটাক্ষ, এই নির্বাচনে মমতা দিদি আত্মঘাতী গোল করেছেন এবং মমতার রাগ দেখে মনে হচ্ছে তিনি নির্বাচনে হেরে গেছেন।

Advertisement

মমতা মুসলিমদের বিজেপির ভয় দেখাচ্ছেন
গত তেসরা এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়দিঘিতে একটি জনসভায় মিম সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং আইএসএফ সভাপতি আব্বাস সিদ্দিকীর উপর কড়া আক্রমণ শানিয়েছিলেন। মমতা অভিযোগ করেছিলেন যে ওয়েইসি এবং আব্বাস  হিন্দু ও মুসলমান ভোট ভাগ করার জন্য বিজেপির কাছ থেকে অর্থ পেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় উপস্থিত সকলকে  বলেছিলেন যে আপনি যদি এনআরসি এবং দেশভাগ না চান তবে তাদের (ওয়াইসি ও আব্বাস) ভোট দিবেন না। তাদের ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়া।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে হিন্দু ও মুসলমানরা এক সাথে চা খাবে এটাই আমাদের সংস্কৃতি। দুর্গা পুজো এবং কালী পুজা একসাথে উদযাপন করা হয়। আমাদের গ্রামে অশান্তি থাকলে বিজেপি লাভবান হবে। টিএমসিনেত্রী মুসলমানদের কাছে হায়দরাবাদের ওয়াইসি এবং  ফুরফুরা শরীফের পীরজাদাকে  ভোট না দেওয়ার আবেদন করেছেন। রায়দিঘিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটারদের যথেষ্ট জনসংখ্যা রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মমতা মুসলমান তাস খেলেছেন। মমতার এই বক্তব্যকে মোদী তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য নিয়ে বিজেপিও তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে।

বাংলায় হিন্দু-মুসলিম ভাগ
প্রথম দুই দফায় রাজ্যে ৬০টি  আসনে  নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার তৃতীয় পর্বে ৩১ টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ চলছে। গত দুই দফার ভোটে আদিবাসী ভোটাররা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং তৃতীয় ধাপে ১০ টি আসন রয়েছে যেখানে মুসলিম ভোট নির্ধারিক ভূমিকা নিতে চলেছে। এবারের নির্বাচনে  ফুরফুরা শরিফ  পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল  কংগ্রেস-বামে জোটে যোগ দিয়েছে। বাকি  পর্যায় গুলিতেও মুসলিম ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দিকে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।

রাজ্যের ১০০টি কেন্দ্রে মুসলিম ভোটের প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার রয়েছেন, যারা রাজ্যের ১০০ টি আসনে নির্নায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর মধ্যে ৪৬  টি আসন এমন রয়েছে যেখানে মুসলিম ভোটাররা ৫০  শতাংশের বেশি এবং ১৬  টি আসন যেখানে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে মুসলিম রয়েছে। এর বাইরেও ৩৩ টি আসন রয়েছে যেখানে মুসলিম ভোটাররা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ওয়াইসির দল থেকে আব্বাস সিদ্দিকী এবং কংগ্রেস-বামপন্থী এই মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের উপর নজর রয়েছে, যার কারণে তৃণমূল চাপে রয়েছে। সে কারণেই মমতা মুসলিম ভোটকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন করছেন।

মমতার মুসলিম কার্ডের ফলেই বিজেপি এখন বাংলায় ভোটে মেরুকরণের সুযোগ পেয়েছে। বিজেপি  এই সুযোগটির সন্ধান করছিল, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্লেটে সাজিয়ে তাদের সামনে দিয়েছেন। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোদী কোচবিহারের সমাবেশে  মমতার মুসলিম কার্ডকে  টার্গেট করেচেন এবং হিন্দু ভোটারদের কাছে একটি রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছেন।

 

Advertisement