সম্প্রতি একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে এখনও নাকি ২৬ শতাংশ ভারতীয় খোলা আকাশের নীচে মলত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে এনডিএ শাসিত বিহার রাজ্যের ৪৪ শতাংশ মানুষ, এবং তামিলনাড়ুর ৩৪ শতাংশ মানুষ খোলা আকাশের নীচে শৌচকর্ম করেন।
এক ব্যবহারকারী একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বচ্ছ ভারতের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। "সর্বশেষ ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এখনও #ভারতে_৩৫_কোটি_মানুষ_খোলা_আকাশের_নিচে #শৌচকর্ম_সারতে_বাধ্য_হন৷ #প্রায়_২৬_শতাংশ ভারতীয় বা প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ এখনও আধুনিক ও কার্যকরী শৌচাগার ব্যবহার করেন না। এই রাজ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষ আজও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন। শোচনীয় অবস্থা তামিলনাড়ুর। সেখানে প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ আজও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন। এই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রমাণ করে মোদির স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যের বড়াই কতটা অতিরঞ্জিত।"
ভাইরাল পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে দেখেছে যে এই তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ এ যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তার থেকে শুধুমাত্র গ্রামীণ এলাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রচার করা হচ্ছে। গ্রামীণ এবং শহর, উভয়ের তুল্যমূল্য বিচারে কিন্তু অন্য তথ্য উঠে আসে।
আফয়া তদন্ত
বিষয়টি সম্পর্কে একটি গভীর ধারণা পেতে আমরা সবার প্রথম এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন ২০২২-এর ১১ মে প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের তথ্য উল্লেখ করে সেখানে লেখা হয়, বর্তমানে ভারতের ১৯ শতাংশ ঘরে পাকা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। ২০১৫-১৬ সালে এই হার ৩৯ শতাংশ ছিল যা এখন কমে ১৯ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ ভাইরাল পোস্টের তথ্য়ে যে গড়মিল রয়েছে তা আন্দাজ করা যায়।
২০২২-এর ৯ মে প্রকাশ পাওয়া দ্য ওয়ার-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়, বর্তমানে দেশের ৮৩ শতাংশ বাড়িতে পাকা বাথরুম রয়েছে। এই হার শহরাঞ্চলে ৯৬ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭৬ শতাংশ। যদিও, কোনও প্রতিবেদনেই ২৬ শতাংশ বা ৩০ কোটি দেশবাসীর খোলা আকাশের নীচে মলত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল না।
সেই কারণে আমরা ন্যাশন্যাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ এর সরকারি রিপোর্ট খতিয়ে দেখা শুরু করি। এই সমীক্ষার সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯-২১ পর্যন্ত ফলাফলের ভিত্তিতে। ৬৭৭ পাতার এই সমীক্ষা রিপোর্টের ১৭ নম্বর পাতায় প্রকাশ্য়ে মলত্যাগ নিয়ে তথ্য প্রকাশ পায়। সেখানে লেখা হয়, দেশের ১৯ শতাংশ ঘরে বাথরুম না থাকার কারণে তারা প্রকাশ্যে মলত্যাগ করেন। সেখানেই উল্লেখ পায় যে এই হার ২০১৫-১৬ সালে ৩৯ শতাংশ ছিল।
ওই সমীক্ষা রিপোর্টের ৩৩ নম্বর পাতায় সর্বমোট পরিসংখ্যান প্রকাশ পায়। যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, শুধুমাত্র গ্রামীণ এলাকায় প্রকাশ্যে মলত্যাগ করেন ২৫.৯ শতাংশ, যা ২৬ শতাংশ বলেই ধরে নেওয়া যায়। শহরাঞ্চলে সেই হার ৬.১। তুল্যমূল্য হিসেবে মোট ১৯.৪ শতাংশ খোলা আকাশের নীচে মলত্যাগ করেন। পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে ভাইরাল পোস্টকার্ডে শুধুমাত্র গ্রামীণ এলাকার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা জাতীয় হার বলে দাবি করা হয়েছে।
এবার চলে আসা যাক বিহারের প্রসঙ্গে। এনডিএ শাসিত বিহারে যে পাকা বাথরুমের হার সবচেয়ে কম এ কথা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ এও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র গ্রামীণ অঞ্চলের। একই বছর বিহারের জন্য প্রকাশিত পৃথক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, এ রাজ্যের মোট জনগণের মোট ৩৯ শতাংশ প্রকাশ্যে মলত্যাগ করেন। যার মধ্যে ৪৪ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের, ও ১২ শতাংশ শহরাঞ্চলের। এ ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলের তথ্যটি সামনে রাখা হয়েছে।
তামিলনাড়ুর পরিসংখ্যানেও গড়মিল রয়েছে। এই সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে তামিলনাড়ুর শহরাঞ্চলে ৯২.৩ শতাংশ, ও গ্রামাঞ্চলে ৭১.৭ শতাংশ বাড়িতে বাথরুম রয়েছে। সর্বমোট ৮১.৫ শতাংশ বাড়িতেই পাকা বাথরুম রয়েছে।
সুতরাং ভাইরাল পোস্টের তথ্য়টি যে বিভ্রান্তিকর, তা বলাই চলে।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ৫ অনুযায়ী, দেশের ২৬ শতাংশ মানুষ প্রকাশ্যে শৌচকর্ম করেন।
ভাইরাল পোস্টে শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সমীক্ষায় রিপোর্টে বলা হয়েছে যে সর্বভারতীয় স্তরে প্রকাশ্য়ে শৌচকর্ম করেন দেশের মোট ১৯ শতাংশ মানুষ।