সংসদে শুরু হয়েছে শীতকালীন অধিবেশন। তবে এর আগের বাদল অধিবেশন নানা কারণে এখনও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল পেগাসাস ইস্যু। সেই সঙ্গে কোভিড সঙ্কট ও কৃষক আন্দোলন নিয়েও সংসদে হই হট্টগোল করেছিলেন বিরোধীরা।
সেই অধিবেশন নিয়েই এবার একটি পোস্টকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, গত জুলাই মাসে যে বাদল অধিবেশন সংসদে শুরু হয়েছিল, সেখানে কেবল মাত্র ১৮ ঘণ্টা চলতে পেরেছিল সংসদ। বিরোধীদের 'হাঙ্গামা'-র কারণে এমনটা হয়েছিল, এবং এর মাধ্যমে করদাতাদের ১৩৩ কোটি টাকা কংগ্রেসীরা জলে ফেলে দিয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেই পোস্টকার্ডটি নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করে লিখেছেন, "কংগ্রেস সমেত হাঙ্গামা করা সমস্ত বিরোধী দল কী ভাবে জনগণের পয়সা ওড়াচ্ছে তার একটা উদাহরণ।"
এই পোস্টকার্ডের আর্কাইভ এখানে এবং এখানে দেখা যাবে।ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই দাবি বিভ্রান্তিকর। এ কথা সত্যি যে বিরোধীদের হট্টগোলের কারণে গত অধিবেশন বারবার স্থগিত করতে হয়েছে। যার দরুণ প্রচুর সময়ও নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বাদল অধিবেশনে মাত্র ১৮ ঘণ্টা কাজ হয়েছিল, এ কথা সত্যি নয়।
আফয়া তদন্ত
অনুসন্ধানে নেমে সবার প্রথম আমরা জুলাই মাসে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনের কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফিনানশিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, চলতি বছর ১৯ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৩ অগস্ট পর্যন্ত বাদল অধিবেশনের সময়কাল ছিল।
তবে দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের দু'দিন আগেই লোকসভা অধিবেশন শেষ করা হয়। ১১ অগস্ট অধিবেশন সমাপ্ত হয়ে যায়। শিরোনামে লেখা হয়, এই অধিবেশনে মাত্র ২২ শতাংশ কাজ হয়েছে লোকসভায়। যার প্রধান কারণ বারংবার বিরোধীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বলেই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা উল্লেখ করেন।
ফলে এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে, বাদল অধিবেশনে লোকসভার কার্যপ্রণালী মসৃণভাবে চলেনি। একই বিষয়ে সিলমোহর দেয় টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেকটি প্রতিবেদন। রাজ্যসভাতেও যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল, এবং উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু ভেঙে পড়েছিলেন, সে কথা লেখা হয়।
কত ঘণ্টা চলেছিল সংসদ?
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনেই উল্লেখ পায়, বাদল অধিবেশনে লোকসভার কার্যক্রম মোট ২১ ঘণ্টা এবং রাজ্যসভার কার্যক্রম ২৮ ঘণ্টা ২১ মিনিট চলেছে। ফলে ভাইরাল হওয়া দাবির বিপরীতে সংসদ যে ১৮ ঘণ্টার বেশি চলেছে, সেই বিষয়টিও পরিষ্কার হয়।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদন আমরা দেখি যার শিরোনামেই লেখা হয় যে, বাদল অধিবেশনে মোট ৪৯ ঘণ্টা সংসদ চলেছে এবং ১৫১ ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটাই ছিল সবচেয়ে কম ফলদায়ক কোনও সংসদ অধিবেশন।
সংসদের দুই কক্ষের কার্যপ্রণালী সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য আমরা পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ নামক ওয়েবসাইটের সন্ধান পাই যা সংসদের খুঁটিনাটি তথ্য তুলে ধরে। সেখানে লেখা হয়, লোকসভা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ কাজ করেছে। ২০১৬ সালের শীতকালীন অধিবেশনের পর এটাই ছিল সর্বনিম্ন। এই অধিবেশনে রাজ্যসভায় কাজ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ। সবমিলিয়ে এটাই স্পষ্ট হয় যে ১৮ নয়, সংসদে ৪৯ ঘণ্টা কাজ বাদল অধিবেশনে হয়েছিল।
সব শেষে করদাতাদের ১৩৩ কোটি টাকা জলে ফেলার দাবির কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাই। যেখানে সরকারি সূত্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে এই হাঙ্গামার জেরে করদাতাদের ১৩৩ কোটির লোকসান হয়েছে। যদিও, এই তথ্যের সত্যতা আজতক বাংলা যাচাই করেনি।
সুতরাং, এ কথা বলাই যায় যে বাদল অধিবেশনে দুই কক্ষ মিলিয়ে ৪৯ ঘণ্টা কাজ হয়েছিল এবং পোস্টকার্ডের দাবি বিভ্রান্তিকর।
বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের হট্টগোলের কারণে সংসদে মাত্র ১৮ ঘণ্টা কাজ হয়েছিল।
বাদল অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৪৯ ঘণ্টা কাজ হয়। যদিও দ্বিতীয়বার মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটা ছিল সর্বনিম্ন ফলদায়ক অধিবেশন।