সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত ১৪ মার্চ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দেওয়া ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই তথ্য অনুযায়ী ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির ঘরে ঢুকেছে সব থেকে বেশি ৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা। খুব একটা পিছিয়ে নেই এ রাজ্যের শাসকদলও। নির্বাচনী বন্ডের থেকে ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে তৃণমূল। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকার হিসাব অনুযায়ী তৃতীয় সর্বাধিক লাভবান দল কংগ্রেস। তাদের ঘরে ঢুকেছে ১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' নামক একটি সংস্থাও ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান প্রদান করেছে। আর এই সংস্থার তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই একে অপরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শাসক-বিরোধী উভয় গোষ্ঠী। তার আঁচ লক্ষ্য করা গেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেখানে 'হাব পাওয়ার কোম্পানি'কে একটি পাকিস্তানি সংস্থা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং দাবি করা হচ্ছে, পুলওয়ামা হামলার পরপরই এই পাকিস্তানি সংস্থা থেকে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান হিসাবে নিয়েছে বিজেপি।
উদাহরণস্বরূপ, মোঃ রবিউল ইসলাম নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারী গত ১৫ মার্চ লিখেছেন, “পুলওয়ামা হামলা হওয়ার পর পাকিস্তানি কোম্পানি " HUB POWER COMPANY"" কাছে এলেক্ট্রোলার বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি মোটা টাকা নিয়েছে।”
অন্যদিকে কিছুটা একই দাবি করে সুপ্রিয় চ্যাটার্জী নামক অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নির্বাচনী বন্ড তালিকায় আছে পাকিস্তানের 'হাব পাওয়ার কোম্পানি'র নাম! তাদের বন্ড কেনার তারিখটা হল- 'যখন পুলওয়ামা কান্ড ঘটেছিল'! পাকিস্তানের কোম্পানির টাকা নির্বাচনে খরচ করেছে বিজেপি, এটা তো পরিস্কার!”
তারক দাস নামক অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী 'হাব পাওয়ার কোম্পানি'র ইলেক্টোরাল বন্ড কেনার তথ্য ও উইকিপিডিয়ার একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, “বি.জে.পি পার্টিকে নির্বাচনে জেতানোর জন্য টাকা দিচ্ছে পাকিস্তানের ''হাব পাওয়ার কোম্পানি"... বি.জে.পিকে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে টাকা দেওয়ার জন্য, তাদের বন্ড কেনার তারিখটা লক্ষ্য করুন- 18 th April ,2019। পুলওয়ামা কান্ডে 40 জনের বেশি ভারতীয় জওয়ান শহীদ হন 14 th February ,2019। শুধু মনে করিয়ে দিলাম.. ভন্ডামি রুখে দেশ বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। প্রস্তুত হোন।” (সব ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত) এই একই দাবি সংক্রান্ত আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল পোস্টের দাবিটি মিথ্যে। ইলেক্টোরাল বন্ডের নথিতে উল্লেখিত 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' নামক সংস্থাটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ইন্ডিয়া টুডের তরফে 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' সম্পর্কে বিষদ তথ্য জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হয়। সার্চ করার সময় আমরা 'ইন্ডিয়ামার্ট'-এ 'হাব পাওয়ার কোম্পানি'র নামে একটি পেজ দেখতে পাই। সেই পেজে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী এই সংস্থাটি এলইডি লাইট, ডেকোরেটিভ লাইট এবং ইলেকট্রিক কেটলি সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী বিক্রি করে। এবং সেখানে সংস্থাটি জিএসটি নম্বর লেখা আছে '07BWNPM0985J1ZX'।
এরপর 'ইন্ডিয়ামার্ট' থেকে প্রাপ্ত নম্বরটি নিয়ে আমরা জিএসটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করি। সেখানে দেখা গেছে 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' নামক সংস্থাটির অফিস দিল্লির গীতা কলোনিতে অবস্থিত এবং সংস্থাটি রবি মেহরা নামক এক ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত।
তবে এটা সত্য যে পাকিস্তানে 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' নামক একটি সংস্থা রয়েছে, যেটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কিন্তু সংস্থাটি নিজেদের অফিসিয়াল ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে ভারতের নির্বাচনী বন্ডে নাম জড়ানোই আপত্তি তুলে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে লিখেছে, ভারতে নির্বাচনী বন্ড ক্রয়কারী 'হাব পাওয়ার কোম্পানির' সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই।
— Hubco (@TheHubPowerCo) March 15, 2024
পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি' ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ৯৫ লাখ টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল। কিন্তু সেই বন্ডের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দল অনুদান পেয়েছে তা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
এর থেকেই প্রমাণ হয় যে, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইলেক্টোরাল বন্ড কেনা 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' নামক সংস্থাটি পাকিস্তানের নয়। এটি একটি ভারতীয় সংস্থা। রবি মেহরা মালিকাধীন এই সংস্থার অফিস দিল্লির গীতা কলোনিতে অবস্থিত। যদিও পাকিস্তানেও এই একই নামে একটি সংস্থা আছে। তবে গীতা কলোনির ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’র সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই।
পুলওয়ামা হামলার পরপরই পাকিস্তানি সংস্থা 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' থেকে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান হিসাবে নিয়েছে বিজেপি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইলেক্টোরাল বন্ড কেনা 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' নামক সংস্থাটি পাকিস্তানের নয়। এটি একটি ভারতীয় সংস্থা। রবি মেহরা মালিকাধীন এই সংস্থার অফিস দিল্লির গীতা কলোনিতে অবস্থিত। যদিও পাকিস্তানেও এই একই নামে একটি সংস্থা আছে। তবে গীতা কলোনির ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’র সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই।