scorecardresearch
 

বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে নিয়ে রাহুল গান্ধী কোনও মন্তব্য করেননি, ভাইরাল পোস্টকার্ডটি ভুয়ো

এসএসসি দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন গান্ধী পরিবারের প্রসঙ্গ চলে আসার পরই এই পোস্টকার্ড ভাইরাল হয়েছে।

Advertisement
রাহুল গান্ধীর ভুয়ো মন্তব্যের পোস্টকার্ড ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়। রাহুল গান্ধীর ভুয়ো মন্তব্যের পোস্টকার্ড ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

রাজ্যে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সৌজন্যে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম এখন চর্চায় রয়েছে। তিনি একাধিক ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি পোস্টকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। 

ভাইরাল সেই পোস্টকার্ডে অভিজিৎ গাঙ্গুলির পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ছবিও দেখা যাচ্ছে। সেখানে লেখা রয়েছে, "উপযুক্ত জবাব রাহুল গান্ধীর। মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ বাবু, আপনাকে সেইদিন সবাই স্য়ালুট জানাবে, যেদিন অমিত শাহ এবং জয় শাহের বেয়াইনি সম্পত্তি নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু বিচারপতি গাঙ্গুলীর সেই বুকের পাটা নেই যে, বিজেপির দিকে আঙুল তুলবে। যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে রাজনীতির উদ্ধে এসে নিরপেক্ষ ভাবে, প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিন। আসা করি আপনি সকলের চোখে হিরো হবেন! বললেন কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী।"

ভাইরাল পোস্টকার্ডের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। 

ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে পেয়েছে যে ভাইরাল পোস্টকার্ডে যে দাবি করা হয়েছে তা সত্য়ি নয়। রাহুল গান্ধী আদৌ এমন কোনও মন্তব্য করেননি। 

ঘটনা হচ্ছে, দিনকয়েক আগেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুনানি চলাকালীন তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি মামলার শুনানির সময় তিনি বলেন,'তেমন পরিস্থিতি হলে পুরো গান্ধী পরিবারের সম্পত্তির হিসাবও চাইতে পারি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধীর টাকার উৎস কী? কোথা থেকে টাকা আসে তাঁদের?' বিচারপতি গাঙ্গুলির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই রাহুল গান্ধী পালটা জবাব দিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। 

আফয়া তদন্ত 

রাহুল গান্ধী এই বিষয়ে আদৌ কোনও মন্তব্য করেছেন কিনা তা জানতে আমরা সবার প্রথম কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখি। যদি রাহুল গান্ধীর মাপের নেতা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করে থাকতেন, তবে কোনও না কোনও সংবাদ মাধ্যমে তা অবশ্যই প্রকাশ পেত। কিন্তু রাহুল গান্ধী ও বিচারপতি গাঙ্গুলি সম্পর্কে এমন কোনও প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাইনি। 

Advertisement

এর থেকেই ভাইরাল পোস্টকার্ডের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। রাহুল গান্ধী, বা কংগ্রেসের অফিশিয়াল কোনও সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও এমন কোনও তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আমরা গুগল অ্যাডভান্স সার্চের সাহায্য নিয়েও খোঁজার চেষ্টা করি, কিন্তু কোনও মতেই এমন কিছু পাওয়া যায়নি যার দ্বারা এই দাবি প্রমাণিত হয়। 

এরপর আমরা খোঁজার চেষ্টা করি যে রাহুল গান্ধী সম্প্রতি সময়ে কী কী বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তখন এবিপি আনন্দ এবং হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার মতো সংবাদ মাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই। সেই প্রতিবেদনগুলিতে লেখা হয় যে দিনদুয়েক আগেই লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সনিয়া-তনয় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, এবং ইউক্রেনের তুলনা কাশ্মীরের সঙ্গে করেছেন। এ বাদেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ভারতের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। তবে কোনও প্রতিবেদনেই বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে নিয়ে তাঁর কোনও মন্তব্যের কথা উল্লেখ করা হয়নি। 

ভাইরাল পোস্টকার্ডে যে কথাগুলি রাহুলকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছিল, সেগুলির কিওয়ার্ড খোঁজার পর আমরা দেখতে পাই যে ওই একই কথাগুলি সুভাষ রায় নামের এক ব্যবহারকারী ২১ মে দুপুর ১টার সময় লিখে ওই সম্পর্কিত খবরের একটি স্ক্রিনশট-সহ পোস্ট করেছিলেন। তবে তিনি রাহুল গান্ধীর প্রসঙ্গে অবতারণা করেননি। 

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, জনৈক সুভাষ রায় নিজের পোস্টে ঠিক যেই যেই বানান ভুল লিখেছিলেন, একই বানান ভুল ওই পোস্টকার্ডেও করা হয়েছে। যেমন বেআইনিকে তিনি লিখেছিলেন 'বেয়াইনি', গাঙ্গুলিকে লিখেছিলেন 'গাঙ্গুলী', আশাকে লিখেছিলেন "আসা" এবং উর্ধ্বেকে লিখেছিলেন 'উদ্ধে'। একই ভাবে সেই সেই ভুলগুলি ওই পোস্টকার্ডেও করা হয়েছে। এবং প্রত্যেকটি পোস্টকার্ড ২১ মে দুপুর ১টার পরই শেয়ার করা হয়েছে। সুতরাং, সুভাষবাবুর পোস্ট থেকেই যে এই পোস্টকার্ড তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে, তা অনুমান করে নেওয়াই যায়। 

এই বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা পেতে আমরা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অর্ণব সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, "যে মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি গান্ধী পরিবার নিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন, তাতে রাহুল গান্ধী বা তাঁর পরিবারের কেউই জড়িত না। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় যে তিনি শুধুমাত্র উদাহরণ দেওয়ার জন্য ওই কথাগুলি বলেন। যদি রাহুল গান্ধী এর পাল্টা মুখ খোলেন, তাহলে তিনিও আইনি প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে যেতে পারেন এবং পুরো বিষয়টা অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। তাই রাহুল এমন কোনও মন্তব্য করবেন না বলেই মনে হয়।"

সুতরাং এ কথা বলাই যায় যে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে নিশানায় নিয়ে রাহুল গান্ধীকে উদ্ধৃত করে যে মন্তব্যের পোস্টকার্ড ভাইরাল হচ্ছে, তার কোনও বাস্তবতা নেই।  

ফ্যাক্ট চেক

facebook user

দাবি

এসএসসি দুর্নীতি মামলার বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে পাল্টা রাহুল গান্ধীর। তিনি বলেছেন, "অভিজিৎ বাবু, আপনাকে সেইদিন সবাই স্য়ালুট জানাবে, যেদিন অমিত শাহ এবং জয় শাহের বেয়াইনি সম্পত্তি নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু বিচারপতি গাঙ্গুলীর সেই বুকের পাটা নেই যে, বিজেপির দিকে আঙুল তুলবে। যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে রাজনীতির উদ্ধে এসে নিরপেক্ষ ভাবে, প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিন। আসা করি আপনি সকলের চোখে হিরো হবেন!"

ফলাফল

রাহুল গান্ধী বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে নিয়ে এমন কোনও মন্তব্যই করেননি। ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে এই লাইনগুলি তুলে রাহুলের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
facebook user
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement