scorecardresearch
 

চিনা বাজি ব্যবহার না করার সতর্কবার্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের? সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দাবি নিয়ে মুখ খুলল পিআইবি

দীপাবলির দিন দশেক আগেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল একটি প্রতিবেদনের ছবি। কী বলা হচ্ছে সেখানে?

Advertisement
প্রতিবেদনের শেষে আবার জনৈক বিশ্বজিত মুখার্জির নাম লেখা। যিনি 'গৃহ মন্ত্রালয়'-এর 'বরিষ্ঠ তদন্ত অধিকারী' বলে দাবি। প্রতিবেদনের শেষে আবার জনৈক বিশ্বজিত মুখার্জির নাম লেখা। যিনি 'গৃহ মন্ত্রালয়'-এর 'বরিষ্ঠ তদন্ত অধিকারী' বলে দাবি।

আলোর উৎসব দীপাবলি আসতে এখনও দিন দশেক বাকি। তার আগেই চিনের 'ষড়যন্ত্র' নিয়ে একটি প্রতিবেদনের ছবি ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবিটি আপত দৃষ্টিতে দেখে মনে হবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনও প্রতিবেদনের অংশ বিশেষ।

ভাইরাল সেই ছবিতে প্রতিবেদনের শিরোনাম রয়েছে- "ভারত সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের খবর।" এর পর লেখা, "গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী চিন ভারতে অ্যাস্থমা (হাঁপানি) রোগ ছড়িয়ে দিতে বাজির মধ্যে এক বিশেষ প্রকার বারুদ ভরছে যা জ্বলার পর কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয় যা শ্বাস-জনিত রোগকে ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া ভারতে চোখের দোষ উৎপন্ন করতে বিশেষ প্রকার সুসজ্জিত লাইটও বানাচ্ছে যাতে অধিক পরিমাণে পারা ভরা হয়ে থাকে। দয়া করে আসন্ন দীপাবলিতে একটু জাগরুক তথা সতর্ক থাকুন যাতে এই সব চাইনিজ জিনিসের ব্যবহার করবে না। এই সংবাদ সকল ভারতবাসী পর্যন্ত পৌঁছে দিন। জয় হিন্দ।" প্রতিবেদনের শেষে আবার জনৈক বিশ্বজিত মুখার্জির নাম লেখা। যিনি 'গৃহ মন্ত্রালয়'-এর 'বরিষ্ঠ তদন্ত অধিকারী' বলে দাবি করা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল এই বার্তার ফেসবুক পোস্টের আর্কাইভ আপনারা এখানে এখানেএখানে দেখতে পাবেন।

ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে দেখেছে, এই দাবি শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, ভুয়োও বটে।  

তদন্তে নেমে সবার প্রথম ভাইরাল হওয়া ছবির প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি শব্দ দেখে আমাদের সন্দেহ জাগে। যা সাধারণত হিন্দিতে প্রয়োগ হয়, এবং বাংলা সংবাদ মাধ্যমে তা ব্যবহারের চল নেই বললেই চলে। যেমন 'পারা', 'জাগরুক' এবং 'গৃহ মন্ত্রালয়'। এই শব্দগুলির বাংলা তর্যমা করলে দাঁড়ায়- পারদ, সজাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সুতরাং, কিছু যে একটা গণ্ডগোল রয়েছে সেই ইঙ্গিত গোড়াতেই পাওয়া যায়।  

তা সত্ত্বেও আমরা বাংলায় ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম সার্চ করে দেখি তা কোথায় প্রকাশ হয়েছে সেটা সন্ধান করতে। কিন্তু তারপরও কোনও সংবাদপত্রে এই প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, এমন কোনও ফলাফল খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন আমাদের সন্দেহ আরেকটু গভীর হয়।

Advertisement

এর পরের ধাপ ছিল কিওয়ার্ড সার্চ, যা কার্যত এই ভাইরাল পোস্টের পর্দাফাঁস করে দেয়। আমরা বিশ্বজিৎ মুখার্জি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কিওয়ার্ড দিয়ে খোঁজা শুরু করলে যা যা রেজাল্ট উঠে আসে, তাতে সাফ হয়ে যায় এই ধরনের ভুয়ো মেসেজ আগেও ভাইরাল হয়েছে। এবং এই বিশ্বজিৎ মুখার্জির নাম করেই ২০১৯ সালে হিন্দি ও ইংরাজিতে তা ভাইরাল হয়েছিল। সে বারও যে তেমন কোনও সাবধানী দেওয়া হয়নি, তা প্রকাশ পেয়েছিল দ্য কুইন্ট এবং অল্ট নিউজের প্রতিবেদনে। সেবার অবশ্য এতে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু এ বার তেমনটা লেখা হয়নি।

ভাইরাল হওয়া এই প্রতিবেদনের অংশটি যে ভুয়ো, তা কার্যত দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায় প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো অব ইন্ডিয়া (পিআইবি)-র একটি টুইটে। গত ১৮ অক্টোবর পিআইবি ফ্যাক্ট চেক অ্যাকাউন্ট থেকে এই একই নাম ও বার্তা-সহ ইংরেজিতে ভাইরাল হওয়া একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট শেয়ার করে লেখা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এমন কোনও সাবধান-বার্তা দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরই চিনা বাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, পটাশিয়াম ক্লোরেট নামের রাসায়নিক ব্যবহার করার কারণে এই বাজিগুলি থেকে নির্গত হওয়া গ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। ভারতের এই সিদ্ধান্তে বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম বাজি প্রস্তুতকারী দেশ চিন। বিগত কয়েক বছর যাবৎ চিনা লাইটের ব্যবহারও কমে এসেছে দেশজুড়ে।

সুতরাং যাবতীয় অনুসন্ধানের পর উঠে আসা ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এ কথা বলাই যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই দাবি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন।

 

ফ্যাক্ট চেক

A Facebook user

দাবি

ভারতীয়দের মধ্যে হাঁপানি ছড়িয়ে দিতে বাজিতে বিশেষ ধরনের বারুদ ভরছে চিন। সতর্ক-বার্তা ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বরিষ্ঠ তদন্ত আধিকারিকের।

ফলাফল

এমন কোনও সতর্ক-বার্তা ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে দেওয়া হয়নি। টুইট করে পরিষ্কার জানিয়েছে পিআইবি ফ্যাক্ট চেক।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
A Facebook user
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement