গত রবিবারই নিজের সাংসদ এলাকা ডায়মন্ডহারবারে জনসভা করে শুভেন্দু অধিকারীকে জবাব দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজয়া সম্মেলনীর এক জনসভায় শুভেন্দু বলেছিলেন ‘প্যারাশুটে নামা ও লিফ্টে ওঠার মতো রাজনীতি করিনি, সিড়ি ভেঙে ভেঙে একটু একটু করে রাজনীতির জায়গা তৈরি করেছি।’ শুভেন্দু অধিকারী নাম না নিলেও খোঁচা যে ছিল তৃণমূল নেত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্রের দিকে তা আর বুঝতে বাকি ছিল না রাজনৈতিক মহলের। তাই শুভেন্দু মন্ত্রীত্ব ছাড়তেই সুর চড়িয়েছিলেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদও। জনসভা অভিষেকের জবাব ছিল, , ‘‘প্যারাশুটে নামলে নিজের এলাকা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ হতাম। আর লিফ্টে উঠলে ৩৫টা পদের অধিকারী হতাম।’’ কিন্তু এই চাঁচাছোলা আক্রমণের পর ৪৮ ঘণ্টাও কাটেনি। মঙ্গলবার কলকাতা শহরের বুকে ফের মুখোমুখি হলেন দুই রাজনীতিক। খালি মুখোমুখি নন দু'জনের টানা দু'ঘণ্টা বৈঠকও হয়। সূত্রের খবর, শুভেন্দুকে একসঙ্গে চলার প্রস্তাব দিয়েছেন অভিষেক। এমনকি বৈঠক চলাকালীন ফোনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং কথা বলেছেন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। বৈঠকের পর তৃণমূল দাবি করেছে, বরফ গলেছে। সমস্যা মিটি গিয়ে পুরনো দলেই থেকে যাচ্ছেন শুভেন্দু। যদিও নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশা নিজে এখনও চুপ। তারপরেও মমতা শিবিরের দুই সেনাপতির মধ্যে এই বৈঠক কিন্তু রাজনৈতিক মহলে সারা ফেলে দিয়েছে। গেরুয়া শিবিরের অনেককিছুও নির্ভর করছে এর উপর। তবে দল যখন শুভেন্দু নিয়ে ব্যস্ত তখন কিন্তু নতুন করে রহস্য তৈরি করে চলেছেন মদন মিত্র। যা নিয়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির।
শুক্রবার মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। আর শনিবার থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কথার ভাঁজে ভাষার প্যাঁচে সকলকে ফেলেছেন কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক। শনিবারই মদন মিত্র ফেসবুকে বলেছিলেন প্যাক আপের কথা। তারপরে ফেসবুক লাইভে তার ব্যাখাও দেন দুঁদে রাজনীতিক। চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন যাঁরা জনপ্রিয় বলে পদ পেয়েছেন, তাঁদের ছয়বছর পরে দেখবেন। রবিবার অভিষেক জনসভায় লিফট প্রসঙ্গ তোলার পর ফের ইজ্ঞিতবাহী মন্তব্য শোনা গেছে তৃণমূল নেতার গলা। সংবাদ মাধ্যমকে মদন বলেছেন, বাড়িতে ক্যাপসুল লিফ' নেই। তিনি কলকাতা মালদাহ, কলকাতা মুর্শিদাবাদ চপারেও চড়েননি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত হল, তৃণমূলের কোনও কোনও নেতার বাড়িতে ক্যাপসুল লিফট রয়েছে। সেই কথাই এখানে বলতে চেয়েছেন মদন মিত্র।
মদনের এই বেসুরো সুরই এখন ভাবাচ্ছে দল ভাঙার আশঙ্কায় ভীত তৃণমূল শিবিরকে। যদিও স্পষ্ট করে কারও নাম নেননি ভবানীপুরের এই শ্রমিক নেতা। এই প্রসঙ্গে বর্ষীয়ণা মদনের বিরুদ্ধে শৃ্ঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে দল চাইলে মদন মিত্রের মত একদা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে বলে স্পষ্ট জানাচ্ছেন সৌগত রায়। যদিও এই সৌগতকেই কিন্তু শুভেন্দুর ব্যাপারে অনেকটাই নরম মেজাজে দেখা গেছে। মঙ্গলবার অভিষেকের সঙ্গে শুভেন্দুর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৌগত। শুভেন্দুর দলে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও তাই আশাবাদী এই তৃণমূল সাংসদ।
এদিকে মদন বেচাল সত্বেও পরিবহণ কর্মীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক প্রকল্পের দেখভাল করার জন্য তাঁর নেতৃত্বেই নতুন কমিটি গড়ল রাজ্য সরকার। পরিবহণ কর্মীদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প রয়েছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথীর মতো প্রকল্পের আওতায় তাঁদের আনা হচ্ছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, অসংগঠিত বা অবহিত না হওয়ার কারণে অনেকে ওই সব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না। সেই বিষয়টিই তত্ত্বাবধান করবে মদনের নেতৃত্বে এই কমিটি।