Rescue Heart Attack By CPR: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আট থেকে আশি এখন আর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও বয়স আঁচ করা যাচ্ছে না। বহু মানুষে আমাদের আশেপাশে সামান্য বয়সে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে আচমকা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। তবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে অনেকের সঙ্গেই। কিন্তু ভয় পেলে হবে না। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে প্রাণ বাঁচতে পারে। চটজলদি সিপিআর দেওয়া হলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুনঃ শীতে গরম জলে স্নানে বিপদ, হতে পারে হার্ট অ্যাটাক; আরও কী বিপদ ?
বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক গবেষণা বলছে, পশ্চিমি দেশগুলির তুলনায় ভারতীয়রা আরও ১০ বছর আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগতে শুরু করেন। এর জন্য নানা কারণ রয়েছে। শারীরিকভাবে কম পরিশ্রম, ডায়াবেটিস, ধূমপান এবং হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য তা ঘটতে পারে। ফলে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে কীভাবে বাঁচবেন তা জানা জরুরি।
অনেক সময় বাঁচার সময় পাওয়া যায় না
কারণ অনেক সময় এমন পরিস্থিতি হয় যখন এটি সামান্য লড়াই করার সুযোগও দেবে না। প্রতি বছর লক্ষাধিক এমন ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার হার ১২ শতাংশেরও কম বলে বলা হয়। এই পরিস্থিতিতে সিপিআর প্রাণ বাঁচাতে পারে। এটি রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রায় সত্তর শতাংশ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বাড়িতে ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে সঠিকভাবে সিপিআর দেওয়া হলে প্রাণ বাঁচতে পারে।
সিপিআর কী?
সিপিআর হল একটি প্রাথমিক চিকিৎসা। যা একজন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময় হাতে পাওয়া যায়। তবে এর জন্য় প্রশিক্ষণ দরকার।
আমরা আপনাকে সিপিআর সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিচ্ছি। তবে সঠিকভাবে প্রয়োগের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে নেবেন।
যেভাবে সিপিআর প্রয়োগ করবেন
সবার উচিত সিপিআর সম্পর্কে ধারণা রাখা। আগে থেকে জানা থাকলে যে কেউ-ই সিপিআর প্রয়োগ করতে পারবেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে কারও জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারবেন। প্রথমেই কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে চিৎকার দিয়ে অন্য কারো সাহায্য চাইতে হবে। দুজন হলে সহজে কাজগুলো করা যাবে।
১. প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের অবস্থা দেখে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো বিপদসংকুল পরিবেশে থাকলে তা দূর করা। যেমন বৈদ্যুতিক তার বা কোনো বিষাক্ত কিছু আশপাশে থাকলে তা সরিয়ে নেয়া।
২. এরপর দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান আছে কিনা। জ্ঞান থাকলে তাকে স্বাভাবিকভাবে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে। যাতে তিনি ধীরস্থিরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।
৩. জ্ঞান না থাকলে তার শ্বাস নেয়ার পথ যেমন- নাক, মুখ ও গলার ভেতরের অংশ পরিষ্কার আছে কিনা দেখতে হবে। তার মাথা পেছনের দিকে টেনে, থুঁতনি ওপরের দিকে তুলে শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে। যদি কফ-রক্ত বা অন্য কোনো কিছু এপথে আটকে থাকে, তবে তা সরিয়ে শ্বাস নেয়ার পথ করে দিতে হবে এবং সিপিআর প্রয়োগ শুরু করতে হবে।
৪. ব্যক্তির এক পাশে এসে বুক বরাবর বসে এক হাতের তালুকে বুকের মাঝ বরাবর ও একটু বামদিকে স্থাপন করতে হবে। তার উপর অপর হাত স্থাপন করে উপরের হাতের আঙুল দিয়ে নিচের হাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। হাতের কনুই ভাঁজ না করে সোজাভাবে বুকের ওপর চাপ দিতে হবে।
৫. এমন গতিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন প্রতি মিনিটে ১০০-১২০টি চাপ প্রয়োগ করা যায়। এভাবে প্রতি ৩০টি চাপ প্রয়োগের পর আক্রান্তের মুখে মুখ রেখে দু’বার ফুঁ দিতে হবে। এটাকে বলে রেসকিউ ব্রেথ। এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন বুকের পাঁজর ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি নিচে নামে। যাতে চাপ হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।
৬. হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা জ্ঞান ফিরে আসা অথবা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া পর্যন্ত একইভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে।
৭. জ্ঞান ফিরলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাকে একপাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এর পর হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঠিক এই সহজ কাজটি কেউ করলে হয়তো প্রাণ বেঁচে যেতে পারে কেউ। CPR লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাওয়া যায় সেগুলো দেখেও এই সহজ অথচ জরুরি কাজটি শিখে নিতে পারেন। জানা থাকলে ভবিষ্যতে আশেপাশের কারো জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারবেন।