বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠল।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরিচালিত হয়। এবং পুলিশ রাজ্য সরকারের। আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এমতাবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও ভাবে কেন্দ্র নাক গলাতে পারে না। আধাসামরিক বাহিনী হল কেন্দ্রের। কাজেই রাজ্য সরকার হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে এখনো প্রস্তুত নয়। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশকে যদি আইনগত ভাবে মানতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার তাহলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটাও একটা মস্তবড় জিজ্ঞাসা চিহ্ন।
বিরোধী দল শুধু বিজেপি নয়। কংগ্রেস এবং সিপিএমের ও বক্তব্য, যে রাজ্যে সন্ত্রাস চলছে। রাজ্যে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। যদিও পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরীয় নির্বাচন রাজ্য সরকারের অধীনেই হয়। কিন্তু হিংসার জন্য কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করতে পারে। এবং সংবিধানের ৩৫৫ ধারাতেও আছে, যে কেন্দ্র সেই ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে একটা জরুরি অবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। রিপোর্ট চাইতে পারে। প্রশ্ন তুলতে পারে। এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের কাছে নালিশ জানানোর ভিত্তিতে আদালত যখন আধাসামরিক বাহিনী দিতে বলেছে তখন অমিত শাহের মন্ত্রক থেকে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে প্রস্তুত।
এখানে অপারেশনাল সমস্যা আসছে। অর্থাৎ কোথায় কোথায় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে সেটা কীভাবে স্থির হবে, সেটা তো রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই কেন্দ্র বলবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন যখন আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের জন্য কোনও জায়গায় নির্দেশ দেবে তখন সেই আধাসামরিক বাহিনীকে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে। কেন না আধাসামরিক বাহিনীকে কিন্তু প্রথমে পুলিশ স্টেশনেই যেতে হবে।
ঠিক যেমনটা ২০২১-এ আধাসামরিক বাহিনীর অভিজ্ঞতা বিধানসভা নির্বাচনের সময় হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে হওয়া সত্ত্বেও আধাসামরিক বাহিনী কিন্তু সেভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কেন না রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া আধাসামরিক বাহিনী কাজ করতে পারে না।
প্রথমত, রাজ্যের যে ভূগোল বা টপোগ্ৰাফি সেটা, আধাসামরিক বাহিনী সবটা জানে না। তাও গতবারে অমিত শাহ নিজে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর কর্মীদের নির্বাচন করেছিলেন, যাঁরা এখানকার ভূগোলটা অনেকটা জানে। ওয়াকিবহাল। কাজ করেছেন। এমনকী কাজ শুরু হওয়ার আগে ভোটের বেশ কিছু আগেই তাদেরকে পাঠিয়ে দিয়ে সেই এলাকা পরিদর্শন করা এবং শান্তির বার্তা নিয়ে মার্চ করে হেঁটে যাওয়া। সে সবও হয়েছিল ২০২১-এ। সেই ইতিহাসের আবার পুনরাবৃত্তি হবে। কিন্তু তাতে রাজ্য সরকার আরও আক্রমণাত্মক হবে। তৃণমূল কংগ্রেস আরও আক্রমণাত্মক হবে। রাজনৈতিক রণাঙ্গনে আরও রক্ত ঝরবে।
তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় হিংসা কি অবশ্যম্ভাবী? পশ্চিমবঙ্গে হিংসার একটা পটভূমি আছে। এবং সেই পটভূমিতে বারবার বলা যায় যে অতীতেও যেরকম হয়েছে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলে আবার হিংসা হবে।
রাজ্য সরকার অবশ্য এই হিংসাটা যাতে না হয় তার চেষ্টা করছে। তার কারণ শাসকদলের তাতে বদনাম হবে। জাতীয় স্তরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার হবে।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনও আসন্ন। এই বদনামের ভাগিদার হতেও তৃণমূল রাজি নয়। কিন্তু আধাসামরিক বাহিনী এখানে কীভাবে কাজ করবে সেটা হল সব থেকে বড় প্রশ্ন! এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া চলছে। এবং নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। এবং এই ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।