দাঁতের গভীর ক্ষতের চিকিৎসায় রুট ক্যানাল চিকিৎসা অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় দাঁতের ভিতরের থাকা নরম সংক্রমিত কোষ, যাকে পাল্প বলা হয়, তা সরিয়ে ফেলা হয়। সংক্রমণের কারণে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা রাসায়নিক প্রয়োগে দাঁত পরিষ্কার করা হয়।
কিন্তু অনেক সময় এই চিকিৎসা সব ব্যাকটেরিয়াকে সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করতে পারেনা। বিশেষ করে, এন্টারোকক্কাস ফিকালিস-এর মতো অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া - যা দাঁতের সূক্ষ্ম নালির ভিতরে গভীরভাবে থেকে যায়, তা নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব। এ ব্য়াপারে এক নতুন দিক খুলে দিয়েছেন এক বাঙালি গবেষক।
খড়গপুর আইআইটি-র প্রাক্তনী
তিনি খড়গপুর আইআইটি-র একজন প্রাক্তনী। ব্যাঙ্গালোর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-এর পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অম্বরীশ ঘোষ খড়গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) থেকে ১৯৯৭ সালে পদার্থবিদ্যায় পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড এমএসসি করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরআই প্রভিডেন্স-এর, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি-ও করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: বামেদের দ্বিতীয় করার চেষ্টা হয়েছে: TMC-CPIM 'আঁতাত' নিয়ে দিলীপ
আরও পড়ুন: একগুচ্ছ পদে ইঞ্জিনিয়ার নিচ্ছে রেল, আকর্ষণীয় মাইনে, আবেদনের খুঁটিনাটি
আরও পড়ুন: পায়ে ফুটে উঠছে নীল শিরা, খুব সাবধান! গুরুতর সমস্যার লক্ষণ
সঙ্গী ছাত্ররা
তিনি এবং তাঁর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-এর ছাত্রদের তৈরি স্টার্ট-আপ থেরানটিলাস সফলভাবে প্রমাণ করেছে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহারে ন্যানোরো-আকারের রোবোর সাহায্যে দাঁতের নালির অতি গভীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলা যায় এবং রুট ক্যানাল চিকিৎসায় এটিকে সফলভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সমীক্ষায় প্রকাশিত
‘অ্যাডভান্সড হেলথকেয়ার মেটিরিয়ালস’-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় গবেষকরা দেখিয়েছেন লোহার প্রলেপ দেওয়া সিলিকন ডাই অক্সাইড দিয়ে তৈরি হেলিকাল ন্যানোরোবট নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। একটি সূক্ষ্ম যন্ত্রের মাধ্যমে যেটা কম ক্ষমতা সম্পন্ন চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। এই ন্যানোরোবটগুলিকে এরপর তুলে ফেলা দাঁতের নমুনায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং এরপর ওই ন্যানোরোবটগুলির চলাচলে নজর রাখা হয় অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে।
গবেষকদের ওই দলটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রঁ করার ওপর জোর দেন। যাতে ন্যানোরোবটগুলির পৃষ্ঠতল তাপ উৎপাদন করতে সমর্থ হয়। যা জীবাণু মারতে সাহায্য করে। চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কম্পাঙ্ক নির্ধারণ করে গবেষকদল ন্যানোরোবটের চলাচল দাঁতের নালির অত্যন্ত গভীরে যাতে প্রবেশ করতে পারে, সে ব্যাপারে জোর হন।
বিজ্ঞানীরা আরও জানাচ্ছেন
এ বিষয়ে আইআইএসসি-র ন্যানো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কেন্দ্রের সহ-গবেষক দেবায়ন দাশগুপ্ত বলেন, “বর্তমানে বাজারে এই প্রযুক্তির থেকে ভাল আর কোনও কিছু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।” এর আগে বিজ্ঞানীরা আল্ট্রাসাউন্ড বা লেজার যন্ত্রের সাহায্যে শকওয়েভের মাধ্যমে জীবাণু বা দাঁতের নোংরা বের করার চেষ্টা করতেন রুট ক্যানাল চিকিৎসায়।
তবে এই ব্যবস্থায় ৮০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে দন্তনালি পরিষ্কার করা যেত। ন্যানোরোবট ২০০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত দন্তনালির ভিতরে ঢুকতে পারে। ন্যানোরোবটের সাহায্যে তাপ সৃষ্টি করে দাঁতের ডাক্তাররা রুট ক্যানাল চিকিৎসা অনায়াসেই সাফল্য পাবে বলে গবেষকদল জানিয়েছেন।
দাঁতের চিকিৎসায় নয়া দিগন্ত
প্রসঙ্গত, ন্যানোরোবট ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই ইঁদুরের দাঁত পরিষ্কার করেছেন এই গবেষকরা। পাশাপাশি, দন্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত এমন এক যন্ত্র তৈরি করেছেন, যেটা মুখের ভিতর অনায়াসেই ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এর সাহায্যে ন্যানোরোবটগুলো দাঁতের নালির ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় রুট ক্যানাল চিকিৎসার সময়।অধ্যাপক ঘোষের মতে, তিন বছর আগে যে পদ্ধতিতে দন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে সম্ভাবনা দেখেছিলেন, সেটা আগামী সময় দন্ত চিকিৎসকরা সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।