এক সপ্তাহ আগেও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) চিফ এক্সিকিউটিভ খেলোয়াড়দের মানবতা নিয়ে খেলতে বলেছিলেন এবং তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তাঁরা টুর্নামেন্টের বায়োসিকিওর বাবলের সীমার মধ্যে পুরোপুরি নিরাপদ। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই পাল্টে যায় চলতি বছরের আইপিএলের চিত্র। ফেটে যায় বায়ো সিকিওর বাবল। আর সেই কারণেই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হলো বিশ্বের অন্যতম বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএল।
লিগ বাতিল হতেই প্রায় ২০০০ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছে বিসিসিআই। খেলোয়াড় এবং মাঠ কর্মীদের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা। একাধিক প্লেয়ারের করোনা পজিটিভ আসে। আর সেই কারণে আইপিএল ২০২১ মঙ্গলবার স্থগিত করা হয়েছিল। তবে কী ভাবে ঘটলো এমনটা! বায়ো সিকিওর বাবলের মধ্যে থেকেও কেমনভাবে ভাইরাসের সংযোগে এলেন ক্রিকেটাররা, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
নিয়ম অনুযায়ী খুব কম সময়ের মধ্যেই কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছিল আইপিএলের প্রতিটি ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে তাঁদের রাখা হয়েছিল জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই। তবে এরই মাঝে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দুই ক্রিকেটার বরুণ চক্রবর্তী ও সন্দীপ ওয়ারিয়ার আক্রান্ত হন কোভিডে। একই সঙ্গে দিল্লি ক্যাপিটালসের অমিত মিশ্র ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঋদ্ধিমান সাহাও শিকার হন এই ভাইরাসের। আর তারপরই উঠে যাচ্ছে প্রশ্ন। এই বিষয় নিয়ে তেমন ভাবে মুখ খোলেননি বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনিও ঠিক নিশ্চিত নন কি ভাবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে পাওয়া গেল এই ভাইরাসের যোগ।
তবে মূল যে বিষয় গুলি উঠে আসছে তার মধ্যে সর্বপ্রথম তালিকায় আছে-
১) একই জায়গায় ম্যাচ অনুষ্ঠিত না হওয়া। গত বছর আরব আমিরশাহিতে একটি জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে ছিলেন ক্রিকেটাররা। মাঠে দর্শকও ছিলো না। ছিলো না বিভিন্ন মানুষের আসা যাওয়াও। তিনটি মাঠে খেলা অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। তবে এবছর ভারতে দেশের মাটিতে এমনটা হয়নি। বিভিন্ন শহর ঘুরে খেলছেন ক্রিকেটাররা।
২) দ্বিতীয় হলো পরিবহন। বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন ক্রিকেটাররা। হোটেল থেকে বেশ কিছুটা যাত্রা করেই মাঠে যেতে হয় তাঁদের। একই সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের মাধ্যমে যাওয়া-আসা করেছেন ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
৩) ট্রেনিং সেশ্যনে প্রতিটি আলাদা আলাদা মাঠে যেতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। সেখানে কাজ করছেন মাঠ কর্মীরাও। পরিষ্কার রাখতে, পিচ তৈরি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করছেন কর্মীরা। তারা সংক্রমিত কী না সেই নিয়েই সন্দেহ থেকেই যায়।
৪) হোটেলেও জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে তৈরি হয়েছিল সন্দেহ। কারণ বিভিন্ন হোটেলে থেকেছেন ক্রিকেটাররা। সেখানেও বদলেছে হোটেল কর্মীরা। সেখান থেকে কোনওভাবে ক্রিকেটাররা সংক্রমিত হয়েছেন কী না সেটাও দেখার।
এছাড়া কিছুদিন আগে খেলার সময় কাঁধে চোট পেয়েছিলেন কেকেআরের ক্রিকেটার বরুণ চক্রবর্তী। তাঁর টিম হোটেল ও মাঠে স্ক্যান ও এমআরআই করার জায়গা না থাকায়, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। গ্রিন করিডর করে নিয়ে গেলেও, কতটা সুরক্ষার মধ্যে ছিলেন তিনি, সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ হওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
এবছর জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে উঠেই যাচ্ছে বিভিন্ন প্রশ্ন, গত বারের আইপিএল করোনা আবহের মধ্যে হলেও ক্রিকেটারদের চিপ ট্র্যাকিংয়ের মধ্যে রাখা হয়েছিল। সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল যাওয়া আসার স্থান। তবে এবছর সম্পূর্ণটা আলাদা ঘটেছে। ফলে এবারের সুরক্ষা বলয় ভেদ করে আক্রমণ করে ফেলেছে মারণ ভাইরাস করোনা। তবে ফের কবে শুরু হবে আইপিএল সেই নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আপাতত ক্রিকেটারদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
অপরদিকে, শুধু আইপিএল নয় ভারতে করোনার ঊর্ধ্বমূখী গ্রাফের কারণে এবার অনিশ্চিত হতে চলেছে আইসিসির টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপও।