
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) আবারও বড় সাফল্য পেল। বিশাখাপত্তনমের নৌ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষাগার (NSTL) সফলভাবে তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের ম্যান-পোর্টেবল অটোনোমাস আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল (MP-AUV)-যা সমুদ্রের নীচে শত্রুর পাতা ল্যান্ডমাইন খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে পারবে। এই প্রযুক্তি ভারতের নৌবাহিনীর মাইন ক্লিয়ারেন্স ক্ষমতাকে আরও অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে।
হালকা, স্মার্ট এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়
নতুন MP-AUV সম্পূর্ণ মানুষ-পরিবহণযোগ্য, অর্থাৎ এটি এতটাই হালকা ও ছোট যে নৌসেনারা সহজেই বহন করতে পারবেন। একাধিক যান একসঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে, যা মিশনের গতি ও নিরাপত্তা বাড়ায়।
যন্ত্রটিতে রয়েছে সাইড-স্ক্যান সোনার ও আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা, যা সমুদ্রের তলদেশ স্ক্যান করে সন্দেহজনক বস্তু দ্রুত সনাক্ত করতে সক্ষম। সোনার শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে নীচের ছবির মতো দৃশ্য তৈরি করে, আর ক্যামেরা রিয়েল-টাইম ভিজ্যুয়াল ফিড সরবরাহ করে।
AI-ভিত্তিক অ্যালগরিদম, নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে রোবট
MP-AUV-এ যুক্ত করা হয়েছে উন্নত ডিপ-লার্নিং অ্যালগরিদম, যার ফলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাইন শনাক্ত করতে পারে। এতে অপারেটরের কাজ অনেক কমে যায় এবং মিশন আরও দ্রুত সম্পন্ন হয়। আগে যেসব কাজ সম্পূর্ণ মানব-নির্ভর ছিল, এবার তা অনেকটাই স্বয়ংক্রিয়।
জলের নীচে দলগত যোগাযোগ
অন্য একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো আন্ডারওয়াটার অডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম। এর মাধ্যমে একাধিক রোবট একে অপরের সাথে তথ্য বিনিময় করতে পারে। যেমন-একটি রোবট যদি মাইন শনাক্ত করে, সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও তা জানতে পারে এবং দলের সমন্বয় আরও শক্তিশালী হয়।
সফল মাঠ পরীক্ষা, শিগগিরই নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে
NSTL-এর হারবারে সম্প্রতি করা মাঠপর্যায়ের পরীক্ষায় MP-AUV সবগুলো প্রযুক্তিগত মানদণ্ডে সফল হয়েছে। একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এটি বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হবে।
DRDO প্রধানের প্রশংসা
ডিআরডিওর চেয়ারম্যান ড. সমীর ভি. কামাত এই সাফল্যের জন্য NSTL দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন-এটি ভারতের মাইন-নিরপেক্ষকরণ ক্ষমতায় বড় মাইলফলক। এই প্রযুক্তি নৌবাহিনীকে আরও নিরাপদ, সক্ষম ও স্মার্ট করে তুলবে।
নৌ-অভিযানে গতি ও নিরাপত্তার নতুন যুগ
সমুদ্রের নীচে ল্যান্ডমাইন মোকাবিলা করা সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন MP-AUV সেই কাজ মানুষকে ঝুঁকিতে না ফেলে সম্পন্ন করবে। নৌ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ভারতের উপকূল সুরক্ষা ও আন্ডারওয়াটার ওয়ারফেয়ার-ক্ষমতায় এক বিপ্লব ঘটাবে।