5 July, 2024
BY- Aajtak Bangla
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় দেহত্যাগের পর পুরীতে জগন্নাথ রূপে আবির্ভূত হন। পুরীর জগন্নাথ মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একটি তীর্থস্থান।
দেশের চার প্রান্তে শ্রীবিষ্ণুর যে চারটি ধাম রয়েছে, তার অন্যতম হল পুরীধাম। বাকি তিনটি ধাম হল দ্বারকা, রামেশ্বরম ও বদ্রীনাথ। শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেরে অগণিত মানুষ জগন্নাথ মন্দির দর্শনে আসেন।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কোনও কিছু প্রার্থনা করলে সেটা পূরণ হবেই বলে ভক্তদের বিশ্বাস। ৮০০ বছরের পুরনো এই জগন্নাথ মন্দিরে আজও এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এককথায় অলৌকিকতা ও রহস্যময়তায় ভরা পুরীর জগন্নাথ মন্দির।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটি প্রায় ৪৫ তলা বাড়ির সমান উঁচু। সেই মন্দিরের একেবারে চূড়ায় একটি পতাকা লাগানো থাকে। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, যে দিকে হাওয়া চলে সবসময় তার বিপরীত দিকে ধ্বজাটি ওড়ে।
জগন্নাথ মন্দিরটি প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং ২১৪ ফুট উঁচু। অথচ এই মন্দিরের চূড়ার কোনও ছায়া দেখা যায় না। যা সাধারণ বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলে না।
যে কোনও উঁচু বাড়ি হোক বা মন্দির, তার উপর দিয়ে পাখি ওড়ার ঘটনা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় কখনও কোনও পাখি বসতে দেখা যায় না। এমনকি মন্দিরের উপর দিয়ে কোনও পাখি উড়তে দেখা যায়নি।
জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় একটি চক্র লাগানো রয়েছে। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, যে কেউ যে কোনও প্রান্ত থেকে ওই চক্রের দিকে তাকান, মনে হবে চক্রটি তাঁর দিকেই ঘোরানো। আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হল, চক্রটির ওজন প্রায় এক টন।
প্রতি ৮, ১২ ও ১৯ বছর অন্তর পুরীর মন্দিরের বিগ্রহ বদল হয়। অর্থাৎ পবিত্র নিম গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথদেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রার নব কলেবর করা হয়। আর পুরানো মূর্তি কোইলি বৈকুণ্ঠের কাছে পুঁতে দেওয়া হয়। জগন্নাথদেবের নবকলেবরের জন্য যে গাছটি নির্বাচিত করা হয়, সেটি মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত এক কাঠুরে গোপনে ২১ দিন ধরে কাটেন। কেউ জানতেও পারেন না।
নব কলেবরের পর মূর্তি বদল করা হয় বিশেষ নিয়ম মেনে। জগন্নাথ মন্দিরের প্রবীণ পুরোহিতের চোখ বেঁধে, হাতে দস্তানা পরিয়ে মূর্তি বদল করা হয়। সেই সময় গোটা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং মন্দিরের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরকে বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর বলা হয়। এই রান্নাঘরে জগন্নাথদেবের জন্য মহাপ্রসাদ তৈরির প্রক্রিয়াও অবাক করা। মাটির তৈরি উনুনে কাঠের আঁচ দিয়ে একটি পাত্রের উপর আরেকটি পাত্র করে পরপর ৭টি পাত্র বসিয়ে রান্না করা হয়।
প্রতিদিন জগন্নাথদেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রাকে ৫ দফায় ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া রোজ ৫৬ ভোগ দেওয়া হয়। যার মধ্যে ভাত, ডাল, সবজি থেকে মিষ্টি, বাদাম-সহ নানা ধরনের খাবার থাকে।
পুরীর সমুদ্রের গর্জন কে না জানে! অনেক দূর পর্যন্ত সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। কিন্তু, জগন্নাথ মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করলে সমুদ্রের গর্জন, ঢেউয়ের কোনও শব্দ শোনা যায় না। কথিত আছে, দেবী সুভদ্রা চেয়েছিলেন মন্দিরের ভিতর নীরবতা বজায় থাকবে। তাই মন্দিরের ভিতর সমুদ্রের শব্দ শোনা যায় না।
সাধারণত উপকূলবর্তী এলাকায় দিনের বেলা সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে এবং রাতে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে। কিন্তু, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে দিনে ও রাতে উল্টোদিকে হাওয়া চলে। যার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।