23 June, 2024
BY- Aajtak Bangla
পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা চলে এসেছে। এমন অবস্থায় উপদ্রব বাড়বে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার।
গবেষকদের মতে, বর্ষার সময় সাপ ডাঙায় বা শুকনো জায়গায় বসবাস করে বা করতে চায়। বর্ষায় চারদিকে জল থাকায় বিষধর সাপও শুষ্ক ও উঁচুস্থানের সন্ধানে মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ে।
এ ছাড়া রাস্তা, উঁচু জমি, কাঠের স্তূপ, খড়ের গাদাসহ যেকোনো জায়গায়ই সাপ আসতে পারে। অবস্থানের সময় মানুষকে দেখলে সাপ ভয় পেয়ে মানুষকে কামড় দেয়। সাপের দংশনের ঘটনা গ্রামাঞ্চলে বা কৃষিসংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশি হয়।
বিষধর সাপের দংশনের পর দ্রুত ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে। জেলা শহর, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সদর হাসপাতালে এই অ্যান্টিভেনম থাকে।
সাপের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু পদক্ষেপ নিলে রোগীর জীবন বাঁচানো সহজ হয়। কিছু সাবধানতা অবলম্বনে এড়ানো যায় সাপের কামড়।
অনেকেই সাপের কামড়ের শিকার হয়ে ওঝার শরণাপন্ন হন। তবে এতে বিশেষ কোনো লাভ হয় না, বরং ক্ষতিই বেশি হয়। সাপ কামড়ালে ওঝার কাছে না গিয়ে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সম্ভব হলে যে সাপ দংশন করেছে, তা চিহ্নিত করার জন্য সেই সাপের ছবি তুলে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে দেখাতে হবে।
চিকিৎকদের মতে, রাসেলস ভাইপার কামড়ালে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। তা ছাড়া রাসেলস ভাইপারের দংশনের পর চিকিৎসা নিতে দেরি হলে রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে শক, পেশি প্যারালিসিস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণ এবং কিডনি অথবা রেনাল ফেইলিওর।
চন্দ্রবোড়া দংশনের শিকার ব্যক্তির কিডনি দ্রুত অকেজো হতে শুরু করে। শরীর জ্বালাপোড়া করার পাশাপাশি দংশনের স্থানে পচন ধরে। একই সঙ্গে দংশনের শিকার ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
সাপে কামড়ালে রোগীকে প্রথমেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় কামড় খেয়ে আতঙ্কিত হওয়ার ফলে। তাই রোগীকে একেবারেই আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না, শান্ত রাখতে হবে। সাপের কামড়ের স্থানটি যথাসম্ভব নড়াচড়া না করানোর চেষ্টা করতে হবে।
সাপে কামড়ানো জায়গা তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে ধুলাবালি না লাগে। হাতের কোনো অংশে সাপে কাটলে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ি, ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি খুলে ফেলতে হবে। কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিতে হবে। তবে সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে কখনোই কাত করে শোয়ানো যাবে না। সব সময় সোজা করে শোয়াতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের নীচে কিছু একটা দিয়ে বুকটা উঁচু করে রাখতে হবে, যাতে আক্রান্ত স্থানটি হার্ট লেভেলের নীচে থাকে।
বিষাক্ত সাপের কামড়ে দুটি দাঁত বসে গিয়ে ক্ষত তৈরি হয়। বিষহীন সাপের কামড়ে অনেকগুলো দাঁতের আঁচড় পড়তে পারে। তাই কামড় দেখে বুঝতে হবে যে এটি বিষাক্ত সাপে কামড়েছে নাকি বিষহীন সাপে কামড়েছে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিষাক্ত সাপের কামড়ে ক্ষতস্থান জ্বালাপোড়া করে। সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন তা লক্ষ্য করতে হবে। সাপের বর্ণনা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারে। কামড় দেখে শনাক্ত করতে ক্ষতস্থান রক্তাক্ত থাকলে আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সাপে কামড়ালে আক্রান্ত স্থান থেকে বিষ চুষে বের করার চেষ্টা করা মোটেও ঠিক নয়। আক্রান্ত জায়গায় কোনো ধরনের ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা ঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাপ যেখানে কামড় দিয়েছে, সেখানে কেটে রক্ত বের করার চেষ্টা করা হয়। এতে আশপাশের রক্ত সংবহনতন্ত্র বা স্নায়ুতন্ত্র কেটে যেতে পারে।
সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। বিষাক্ত সাপে কাটলে বাঁচার পথ একটাই। দ্রুত হাসপাতাল যাওয়া। দংশনের পর আত্মীয়ের পরামর্শ, ওঝা-ঝাড়ফুঁকের নামে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে সোজা রোগীকে নিয়ে বড় সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে।
কৃষিজমিতে কাজের সময় অবশ্যই গামবুট পরতে হবে। সম্ভব হলে হাতে গ্লাভস পরতে হবে। সাপ হাত এবং পায়ে দংশন করে সবচেয়ে বেশি। রাতের বেলা লাইট নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। রাতে জমিতে কাজ না করাই ভালো। জমির ধান, ভুট্টাসহ নানা ফসল কাটার জন্য যান্ত্রিক মেশিন ব্যবহার করা ভালো।