24 MAY, 2025
BY- Aajtak Bangla
সত্যি টিকটিকি, অনেকেই মনে করেন কোনও কথা বলার সময় হঠাৎ টিকটিকি ডেকে উঠলে, বলা কথা যে সত্যি, সেটা প্রমাণিত হয়।
কিন্তু এরকম মনে হওয়ার কারণটা কী? আসলে এর পিছনে রয়েছে খনার বচনের কাহিনি।
জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বাঙালি নারী ছিলেন খনা। বাঙালি লোকসংস্কৃতিতে এখনও অমৃতবাণীর মতো খনার বচনের প্রচলন রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে খনার বচন।
খনার জন্ম হয়েছিল এখনকার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের দেউলি গ্রামে। খনার বাবার নাম অনাচার্য। খনা বেড়ে উঠেছিলেন রাজা ধর্মকেতুর শাসনকালে। খনার সঙ্গে বরাহ-মিহিরের এক যোগ রয়েছে।
উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে রাজ জ্যোতিষী ছিলেন বরাহ। আর তাঁর পুত্র ছিলেন মিহির। মিহিরের জন্মের পর বরাহ ভবিষ্যৎ গণনা করে দেখেছিলেন, ছেলের আয়ু মাত্র ১ বছর।
এরপর আশাহত হয়ে মিহিরকে একটা তামার পাত্রে শুইয়ে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেন তিনি। সেই পাত্র ভাসতে ভাসতে এসে থামে সিংহল দ্বীপে। সেখান থেকে সিংহলের রাজা তাঁকে তুলে লালন পালন করেন।
পরবর্তীতে এই মিহিরের সঙ্গে খনার বিয়ে হয়। আর তাঁরা থাকতে শুরু করেন বঙ্গদেশে। পরে তাঁরা উজ্জয়িনীতে এসে বরাহের সঙ্গে দেখা করেন। বরাহ তাঁর ছেলের আয়ু নিয়ে করা গণনার কথা বললে, খনা তা ভুল প্রমাণিত করেন।
এরই মাঝে এক জোৎস্নারাতে রাজা বিক্রমাদিত্য আকাশের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রের সংখ্যা জানতে চান। বরাহ এবং মিহির সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও খনা অনায়াসে সেই প্রশ্নের উত্তর দেন।
খনার এই বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে রাজা বিক্রমাদিত্য মুগ্ধ হয়ে খনাকে তাঁর রাজসভার দশম রত্ন হিসেবে সম্মানিত করবেন মনোস্থ করেন। কিন্তু পুত্রবধুর খ্যাতি মেনে নিতে পারেননি বরাহ।
এরপর পুত্র মিহিরকে তাঁর স্ত্রী তথা খনার জিভ কেটে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন বরাহ। বাবার আদেশ শুনে মিহির চমকে উঠেছিলেন। কিন্তু খনা শান্ত হয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁকে যেন ৭দিন সময় দেওয়া হয়।
সেই সময়ের মধ্যে তিনি দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষদের জন্য কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান। এই ৭দিন ৭ রাত্রির অনর্গল বচনই খনার বচন নামে পরিচিত।
৭ দিন শেষ হওয়ার পর খনার জিভ কেটে নেওয়া হয়। আর খনার সেই কাটা জিভ খেয়ে ফেলে একটি টিকটিকি। ফলে সে খনার জ্ঞান লাভ করে। কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না। তাই টিকটিক শব্দের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় যে কোন কথাটি সঠিক।