Open Letter To Bengal CM: পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে চলা রাজনৈতিক হিংসায় গত ৩৭ দিনে ৫২ জনের প্রাণ কেড়েছে, নিখোঁজ বহু মানুষ। বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বেলাগাম হিংসা, প্রাণহানি দেখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখেন ক্ষুব্ধ-আতঙ্কিত বিশিষ্টজনদের একাংশ। ওই চিঠি একটি অনুষ্ঠানে পাঠ করে সকলকে শোনালেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন।
কলকাতার ভারতসভা হলে বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের এক আলোচনাচক্রের পরে ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসে। আলোচনাচক্রে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনার পরে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে চলা হিংসার ঘটনায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি এ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল সরকারেরও তীব্র নিন্দা করেন বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, “এই পরিবর্তন আমরা কেউ চাইনি”।
পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের সর্বত্র যে হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মূলত সেটাকেই নিশানা করে একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন অপর্ণা সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্টরা। ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে যে বেলাগাম সন্ত্রাস, খুনোখুনি হয়েছে, প্রশাসন তার দায় অস্বীকার করতে পারে না। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে বাংলায় হওয়া এই হত্যালীলা, অরাজকতার জন্য নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে দায় নিতে হবে। কারণ, স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নির্ভর করেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আর নির্বাচন কমিশনকে ভোটপর্ব চালাতে হয়।
চিঠিতে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করে রাজ্যবাসীর জীবিকা, সম্পত্তি ও প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব নিতে মানুষের নির্বাচিত সরকারকেই উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের পরিস্থিতিকে 'জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ' বলে ব্যাখ্যা করেছেন অপর্ণা সেন। তিনি বলেন, “আমার বলার মতো কিছু নেই। সকলের মতো আমিও নিরুপায় হয়ে দেখছি। কারণ, কিছু বলেও তো কোনও লাভ হচ্ছে না!”
শুধু তৃণমূলকেই নয়, রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ করেছেন অপর্ণা। তিনি বলেন, “এই দেশে বিন্দুমাত্র গণতন্ত্র আর অবশিষ্ট নেই। কিছু দিন পরে হয়তো এই ভাবে কথাও বলা যাবে না। রাজ্যের শাসকদলকে ধরে সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই বলছি, সব দল সম্পূর্ণ ভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। আর যারা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, তারা ভোটে কোনও আসনই পায় না।”
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ঘটনায় সে সময় বাম জোট শাসিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে বুদ্ধিজীবীরা সরব হয়েছিলেন, বাংলায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন, সেই দলে ছিলেন অপর্ণাও। বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সে সময় পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। ওই সময়ে বাম সরকার যা করছিল, তা খুবই অন্যায়। বামেদের হার্মাদ বাহিনী গ্রামে ভোট দিতে দিত না। আমরা সেটা ভুলিনি। কিন্তু তার পরিবর্তে এটাও তো আমরা চাইনি।”
তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বৃহস্পতিবার অপর্ণা সেন বলেন, “আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইনি, আমি পরিবর্তন চেয়েছিলাম। তখন উনি ভোট পেয়েছেন, তাই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কোনও সাংবিধানিক পদের দায়িত্বে আমাকে ডাকলে আমি গিয়েছি। নন্দনে চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওঁর কাছে আমাদের সুবিচার চাওয়া উচিত। কিছুই তো হচ্ছে না।”