২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল বিজেপি। লোকসভার ফলাফলের নিরিখে ১২১টি বিধানসভা আসনে এগিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এই ফলাফলকে একুশের ভোটে প্রচারের হাতিয়ার করেন মোদী-শাহরা। দিলীপ ঘোষরা দাবি করেন, বাংলায় বিজেপির ভিত মজবুত হয়েছে। নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কও তৈরি হয়েছে। কিন্তু, গতকাল ভোটের ফলাফল সামনে আসার পর ভোটব্যাঙ্কের মিথ যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
তাঁদের মতে, উনিশের ভোটে রাজ্যের মানুষ মমতার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। কারণ, ২০১৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে নজিরবিহীন হিংসা হয়। বেশিরভাগ জায়গায় ভোট করতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের এই ভূমিকার বিরোধিতা স্বরূপ লোকসভায় ভালো ভোট পায় গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন : 'ভ্যাকসিনের অভাব আরও কিছু মাস চলবে,' স্পষ্ট বললেন সিরাম-কর্তা
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে কার্যত ভরাডুবির পর নিজেদের ভুল বুঝতে পারে ঘাসফুল শিবির। সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে নেমে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। জেলায় জেলায় নেতৃত্বের রদবদল ঘটান। ভোট কৌশলী হিসেবে নিযুক্ত করেন প্রশান্ত কিশোরকে। একাধিক নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেন। এভাবেই ফের মানুষের বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি। যার প্রভাব দেখা যায় একুশের ভোটবাক্সে। উনিশের ভোটে যে ১২১টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি, একুশের ফলাফলে দেখা যায়, সেগুলিও ধরে রাখতে সক্ষম হননি দিলীপ ঘোষরা।
তাহলে কি ভোটব্যাঙ্ক শুধুই মিথ?
তৃণমূল বরাবর দাবি করে এসেছে এরাজ্যে বিজেপির কোনও ভোট ব্যাঙ্ক নেই। সংগঠনই নেই। ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হবে কোথা থেকে? ভোটের ফলাফল সামনে আসার পর এই নিয়ে আরও সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক কোনওদিনই এরাজ্যে ছিল না। উনিশের লোকসভায় ওরা আসন পেয়েছিল ঠিকই তবে তা সংগঠনের জোরে নয়। এখন তো বিজেপি তিনভাগে বিভক্ত। আদি, নব্য আর দিল্লি। ওরা অন্য রাজ্যে রেজিমেন্টেড হতে পারে। এরাজ্যে নয়। তার প্রমাণ মানুষ দিয়েছে। আর আগামীদিনেও সংগঠন মজবুত করার কোনও আশাও ওদের দেখছি না।'
আরও পড়ুন : মুর্শিদাবাদে 'অধীর মিথ' চুরমার, ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন 'দাদা'?
তবে তৃণমূলের দাবি মানতে নারাজ গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, 'যাঁরা বলছেন রাজ্যে বিজেপির সংগঠন নেই, তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। এবার পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে ওরা ভোট করেছে। কোনও কোনও জায়গায় মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট করিয়েছে। তাই আমাদের ফল খারাপ হয়েছে।'