কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত বর্তমানের উল্লেখ্য বিষয় নয়। মতানৈক্য থেকে আদর্শ ও রাজনৈতিকগত পার্থক্য থেকেই 'বিমাতৃসুলভ' দায় একে অপরের প্রতি দিয়েই থাকে। কিন্তু আইনি ক্ষেত্রে এমন তরজা বোধহয় নতুন। আইন দেশেরও যা রাজ্যেরও তাই (তাই হওয়া উচিত)। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের যে শীতল লড়াই চলছে ভোট পরবর্তী বাংলায়, তা কার্যত বেনজির।
শীতলকুচির ঘটনাই ধরা যাক। রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের দিন কোচবিহারের শীতলকুচির জোড়পাটকির বুথের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় চলেছিল রাজ্যে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও মাথাভাঙার মহকুমা পুলিশ সুপার, থানার অফিসার-ইনচার্জ, তদন্তকারী অফিসার, ঘটনার দিনের ক্যুইক রেসপন্স টিম, সেক্টর অফিসারকে যেমন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। তেমন পুলিশ সুপারের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মমতাও।
নির্বাচনের আগেই পুলিশ ও প্রশাসনিক স্তরে রদবদল করেছিল নির্বাচন কমিশন। মমতার অভিযোগ, "'কয়েকজন পুলিশ বিজেপির হয়ে আসরে নেমেছিল। সেইসব পুলিশ অফিসার মনে করে ঠিক কাজ করেছে, আমি মনে করি না। আইন সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের।" ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বদল ঘটান মমতা। এরপরই রাজ্যে এসে শীতলকুচির ঘটনার পুনর্নিমাণ করেন সিআইডি কর্তারা।
এরই মাঝে সোমবার নারদ মামলায় গ্রেফতার তৃণমূলের ৪ হেভিওয়েট নেতা। ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই গ্রেফতার করতেই নিজাম প্যালেস ছুটে যান মমতা। চোখে মুখে অসন্তোষ স্পষ্ট। তাঁকে গ্রেফতারের চ্যালেঞ্জও দেন। চার নেতার জামিন মঞ্জুরের পর তিনি সিবিআই দফতর ছাড়লেও মাঝরাতে ফের গ্রেফতার ও প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো শোরগোল ফেলেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে>
এ যেন নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ। যদিও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের কলকাতা পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু পরোক্ষ অসন্তোষ তারা প্রকাশ করেছে। চার মন্ত্রীর গ্রেফতারিতে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ইটবৃষ্টি, লাঠিচার্জও চলে। হাইকোর্টে সেই ঘটনা জানিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধেই সুর চড়ায় সিবিআই। সংঘাত আবহ জারি রেখেই হাইকোর্টে শুনানি পর্বে সিবিআই এর তরফে এই মামলাকে ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ হিসেবে চিহ্নিত করে নারদ মামলা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সরানোর জন্যেও আবেদনও করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে বাহিনীকে 'বিজেপির' পক্ষ হিসেবেই তোপ দেগে এসেছে তৃণমূল। আবার রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের 'রাজনীতিকরণ' করেছে তৃণমূল, অভিযোগ করেছিলেন মোদী-শাহ এমনকী রাজ্যপালও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বনাম রাজ্য পুলিশের লড়াই আসলে বিজেপি বনাম তৃণমূলেরই। অন্তত সাম্প্রতিক ঘটনায় সে সুর স্পষ্ট।