scorecardresearch
 

World Hypertension Day 2023: হাই ব্লাড প্রেশারের ফলে ঘনিয়ে আসছে মৃত্যু, কীভাবে বুঝবেন? জানুন

১৭ মে দিনটি বিশ্ব রক্তচাপ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা থেকে একাধিক সমস্যা আসতে বাধ্য। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর তাই এই উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।

Advertisement
প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি
হাইলাইটস
  • ১৭ মে দিনটি বিশ্ব রক্তচাপ দিবস হিসেবে পালন করা হয়
  • রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা থেকে একাধিক সমস্যা আসতে বাধ্য
  • হতে পারে মৃত্যুও

১৭ মে দিনটি বিশ্ব রক্তচাপ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা থেকে একাধিক সমস্যা আসতে বাধ্য। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর তাই এই উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।

কীভাবে সুস্থ থাকবেন তা নিয়ে পরামর্শ দিলেন ডাক্তার অভিনয় টিবরেওয়াল। তাঁর মতে, হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ ব্যাধি। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ না করা হলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। এমনকী আকস্মিক মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে প্রভাবিত করে যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনির নানান রোগের সবচেয়ে সাধারণ কারণ।

ডাক্তার অভিনয় টিবরেওয়াল জানান, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল পদক্ষেপ হল স্বাস্থ্যকর জীবন মেনে চলা। নিম্নলিখিত উপায়ে জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।

  • * অতিরিক্ত ওজন কমানো
  • * ধূমপান ত্যাগ করা। তামাক রক্তনালীগুলির দেয়ালগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ধমনীকে কঠিন করে তোলে। আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করে।
  • * নিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া, যা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি, ফল, গোটা শস্য, মাছ, মুরগি, বাদাম এবং মটরশুটি খাওয়া প্রয়োজন। উচ্চ-পটাসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন, অ্যাভোকাডো, কলা, ড্রাই ফ্রুটস , টমেটো এবং কালো বিন খাদ্যতালিকায় রাখা বিশেষ আবশ্যক। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনিযুক্ত পানীয়, মিষ্টি, চর্বিযুক্ত মাংস এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য নৈব নৈব চ।
  • * উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে ডায়েটে সোডিয়ামের পরিমাণ দিনে ১৫০০ মিলিগ্রামের কম রাখতে হবে। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ দিনে ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি (প্রায় ১ চা চামচ লবণ) হওয়া উচিত নয়। এছাড়াও অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রক্রিয়াজাত স্যুপ, মশলা এবং টমেটো সসে একজন সাধারণ মানুষের প্রতিদিন যা লবণ গ্রহণ করা উচিত তার ৭৫% শতাংশ বেশি থাকে। খাবারের পিছনে থাকা লেবেল (যেখানে সোডিয়াম লবণ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে) দেখে ব্যবহার করা উচিত। পরিবর্তে  খাবারের স্বাদ বাড়াতে মশলা এবং ভেষজ হার্ব ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • * নিয়মিত অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করা। সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন 30 মিনিট দ্রুত হাঁটা। যোগাসন, বাইক চালানো বা সাঁতার কাটা যেতে পারে।
  • * আপনার বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ওজন রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যদি ওজন বেশি হয় বা স্থূলতা থাকে তবে মাত্র৫ পাউন্ড ওজন কমিয়েও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
  • * অ্যালকোহল সেবন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • * মানসিক চাপ কমানো। এজন্য একজন কাউন্সিলরের সাথে কথা বলা, ধ্যান বা রাগ-নিয়ন্ত্রণ কৌশল শেখা বা নিয়মিত বডি ম্যাসেজ করার মতো পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপের নানাবিধ কারণ রয়েছে। বিভিন্ন ঝুঁকির কারণগুলি হল:
  • * ধূমপান.
  • * অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া।
  • * শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
  • * খাবারে অত্যধিক লবণ।
  • * অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন
  • * মানসিক চাপ।
  • * বয়সজনিত।
  • * জিনঘটিত।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া, হরমোনের সমস্যা, কানেকটিভ টিস্যু ডিসওর্ডার এবং বিশেষভাবে  হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট, স্টেরয়েড, কিছু ব্যথানাশক ওষুধ, কিছু ভেষজ ওষুধ বিশেষ করে যেগুলির মধ্যে লিকার আইস, রিক্রিয়েশনাল ড্রাগস যেমন কোকেন অ্যামফিটামাইনস ও  অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টস থাকে, সেগুলিও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান শতাব্দীতে সবচেয়ে প্রচলিত লাইফস্টাইল রোগের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। ভারতে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং আক্রান্তদের বেশিরভাগই এ বিষয়ে সচেতন নয়। 

আমাদের জীবন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজতর হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় বসে কাজ করা, অলসতা, খারাপ খাদ্যাভ্যাস এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাব মানুষকে এই মহামারীর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

উচ্চ রক্তচাপে দুটি ধাপ রয়েছে। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি। প্রাথমিকভাবে অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা এবং জেনেটিক কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেকেন্ডারি ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা সহ নানান ক্রনিক অসুখের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়।

উচ্চ রক্তচাপের শ্রেণীবিভাগ:

  • সাধারণ BP SBP
  • উচ্চ-স্বাভাবিক BP SBP 130-139 এবং/অথবা DBP 85-89
  • গ্রেড 1 হাইপারটেনশন SBP 140-159 এবং/অথবা DBP 90-99
  • গ্রেড 2 হাইপারটেনশন SBP>160 এবং অথবা DBP>100

উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষেরই কোনো উপসর্গ থাকে না। এমনকি রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে উচ্চ মাত্রায় পৌঁছালেও তা বোঝা যায় না। কোনো লক্ষণ ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ:

  • * মাথাব্যথা
  • * শ্বাসকষ্ট
  • * নাক দিয়ে রক্ত পড়া

তবে এই লক্ষণগুলি সকলের ক্ষেত্রে দেখা নাও যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ গুরুতর বা প্রাণঘাতী পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত এগুলি সাধারণত ঘটে না।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে ধমনীর দেয়ালে অতিরিক্ত চাপ রক্তনালী এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। রক্তচাপ যত বেশি হবে এবং তা যত বেশিক্ষণ অনিয়ন্ত্রিত হবে, তত বেশি ক্ষতিকারক হবে।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ নানান জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে যার মধ্যে রয়েছে:

  • * হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য কারণের কারণে ধমনী শক্ত হওয়া এবং রক্ত ঘন হয়ে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
  • * অ্যানিউরিজম। বর্ধিত রক্তচাপ একটি রক্তনালীকে দুর্বল করে দিতে পারে। রক্তনালি ফুলে গিয়ে অ্যানিউরিজম গঠন করতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যানিউরিজম যদি ফেটে যায় তবে এটির ফলে  জীবন সংকট দেখা দিতে পারে।
  • * হার্ট ফেইলিউর। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করার জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। স্ট্রেন হার্টের পাম্পিং চেম্বারের দেয়ালকে ঘন করে তোলে। এই অবস্থাকে লেফট ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি বলা হয়। অবশেষে, হৃদপিণ্ড শরীরের প্রয়োজন মেটাতে পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না, যার ফলে হার্ট ফেইলিউর হয়।
  • * কিডনির সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির রক্তনালীগুলো সরু বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এতে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
  • * চোখের সমস্যা. বর্ধিত রক্তচাপ চোখের রক্তনালী ঘন কিংবা সরু করে দিতে পারে অথবা তা ছিঁড়ে যেতে পারে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।
  • * বিপাকীয় সিন্ড্রোম. এই সিন্ড্রোম হল শরীরের বিপাকের ব্যাধিগুলির মধ্যে অন্যতম। এতে শরীরে চিনি বা গ্লুকোজের অনিয়মিত হয়। এর ফলে কোমরের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে, ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তে থাকে, উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল বা "ভাল") কোলেস্টেরল কমে যায়, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
  • * ভাবনাচিন্তা, মনে রাখার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ চিন্তা করা, মনে রাখার এবং শেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • * ডিমেনশিয়া। সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ ধমনী মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ সীমিত করতে পারে। এটি ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া নামক একটি নির্দিষ্ট ধরণের ডিমেনশিয়া হতে পারে। স্ট্রোক যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয় তাও ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া ঘটাতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি অপরিহার্য, এবং এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ পরিচালনার প্রাথমিক পদক্ষেপ। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির কারণগুলি মূল্যায়ন করা হয়, তাই জীবনধারার দিকে মনোযোগ দিন যা বিপি স্তরকে অনুকূলভাবে প্রভাবিত করে এবং সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

Advertisement

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করার জন্য, প্রত্যেককে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করা উচিত। যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, ধূমপান ত্যাগ করা, ব্যায়াম করা, সঠিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা।

 

Advertisement