অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত বিদ্যুৎচালিত মেট্রেরেলের দুয়ার খুললো বাংলাদেশ। বুধবার দুপুরে সবুজ পতাকা উড়িয়ে মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই নগর পরিবহনের ১০ মিনিটের যাত্রায় প্রথম যাত্রীও হন তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক কণ্যা শেখ রেহানাও সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর।
বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মেট্রোরেলের ছবি সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিট ও ৫০ টাকার স্মারক নোট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ফিতা কেটে মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। পরে টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবেও মেট্রোরেলে ওঠেন তিনি। প্রথম যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাককর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
বুধবার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, ঢাকাবাসীকে আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার চরণ উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোন মতে!”
সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তৃতা করেন তিনি। কবি নজরুল ইসলামের কবিতার সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
২০১৬ সালে ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই লাইনের নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি-৬।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল হলেও শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে বৃহস্পতিবার থেকে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন সাধারণ মানুষ। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি কাটিয়ে খুব অল্প সময়েই এই রুটে চলাচলের দুয়ার খুলছে ঢাকাবাসীর।
জনগণকে নিয়ম মেনে পরিচ্ছন্নভাবে মেট্রোরেল ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে হাসিনা বলেন, “একটা অনুরোধ থাকবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এটার মান নিশ্চিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এই সবকিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবেন তাদের দায়িত্ব। এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। এই সমস্ত জিনিস যেন নষ্ট না হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলে যত্নবান হবেন। খেয়াল রাখবেন কেউ যেন আমাদের রেল স্টেশনগুলিতে আবর্জনা-ময়লা না ফেলে, অপরিচ্ছন্ন করতে না পারে- সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।” হাসিনা আরও বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুন্দরভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা ব্যবহার করার জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি, অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাব, যদি আপনারা কথাগুলি মেনে চলেন।”