গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে রয়েছেন পরীমনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিনেত্রী। তারপরেই একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এদিন সেই মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন অভিনেত্রী। আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান পরীমনি। আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মামলায় মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন ঢাকাই নায়িকা পরীমনি। এর আগে রবিবার পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলায় বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। একইসঙ্গে পরীমনি আদালতে হাজির না হলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
পরীমনির আইনজীবী নিলাঞ্জনা রিফাত জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল রবিবার। পরীমনির পক্ষ থেকে তিনি শুনানির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে দিয়ে পরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একইসঙ্গে পরীমনি অনুপস্থিত থাকায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বলে জানান আইনজীবী। পরীমনির আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলার শুনানি চলছিল। অসুস্থতার জন্য পরীমনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। অভিনেত্রী নিজেও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আদালতে যাওয়ার বিষয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। আগেও ছিল না। এমনকি যখন তিনি সন্তানসম্ভবা, তখনও অন্য একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। এ দিন তিনি এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। ফলে হাজিরা দিতে পারেননি। তিনি সময় চেয়ে আবেদন করলেও রবিবার আদালত অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটিতে পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে। সেই সময় আদালত পরীমনিকে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছিল।
২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরীমনি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয়, ২০২১ সালের ৮ জুন পরীমনি ও তার সঙ্গীরা সাভার বোট ক্লাবে ঢুকে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে মদ পান করেন। রাত ১টা ১৫ মিনিটে ক্লাব ছাড়ার সময় পরীমনি নাসিরকে ডেকে এক বোতল ব্লু লেবেল হুইস্কি বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাসির রাজি না হলে পরীমনি তাকে কটূক্তি করেন এবং একটি গ্লাস ছুড়ে মারেন। ওই গ্লাস নাসিরের মাথা ও বুকে আঘাত করে বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে পিবিআই তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের এপ্রিলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে পরীমনি ও তার পোশাক ডিজাইনার জিমির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে ২০২১ সালের ৮ জুন ঘটনার দিনই পরীমনি সাভার থানায় নাসির ও আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ২০২২ সালের ১৮ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ মামলাটিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। এদিকে, এই মামলা ছাড়াও পরীমনি ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা ঢাকার স্পেশাল জজ কোর্ট-১০ এ চলছে।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের একটি অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন পরীমনি। হেফাজতে ইসলামসহ বেশকিছু সংগঠন পরীমনির আগমন ঠেকানোর জন্য প্রচার শুরু করে বলে অভিযোগ ছিল অভিনেত্রীর। এই নিয়ে প্রশ্নও তোলেন পরী, কেন স্বাধীন দেশে নিরাপদ নন দেশবাসী? উদাহরণ হিসেবে দেশের খ্যাতনামী মেহজাবীন, পরশী-র নাম উল্লেখ করেন। জানান, তাঁরাও এর আগে হেনস্থার শিকার হয়েছেন! পরের দিনই তাঁর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় ও পার বাংলার অনেকেরই প্রশ্ন, সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর ফলেই কি তড়িঘড়ি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে। এই প্রশ্ন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও পরীমণির কাছে করেছিল। তাতে পরীর জবাব ছিল, “কোনও কালেই অন্যায় দেখে চুপ থাকিনি। আগামীতেও থাকব না। আমার গায়ে লাগলে কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। বাকিদের মতো চুপ করে থাকতে পারি না।” তাঁর দাবি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যদি বারে বারে জেলে যেতে হয় তাতেও রাজি তিনি। পাল্টা প্রশ্নও তোলেন, “কিছু বললেই যদি জেলে পাঠায় তা হলে তো দেশের কেউ কথাই বলবে না! সবাই কি বোবা হয়ে থাকবে?”