বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপরে একে পর এক হামলার মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহম্মদ ইউনূস ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে সঠিক তথ্য চান। নোবেলজয়ী বলেন, 'সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। কিন্তু বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক রয়েছে। আমরা এই বিষয়ে সঠিক তথ্য চাই এবং তথ্য পাওয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে চাই।' যদিও ইউনূস কোনও নির্দিষ্ট বিদেশি মিডিয়ার কথা উল্লেখ করেননি, তাঁর অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার অনেক সহকর্মী ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন।
মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউনূস বলেন, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পড়ে আমার মনে নানা প্রশ্ন জাগছিল, তার পরই আমি এই বৈঠক ডেকেছি। মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সঠিক তথ্য কীভাবে পেতে হবে, দয়া করে আমাদের জানান। অনেক সময় অফিসিয়াল তথ্যও কাজে লাগে না।'
ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে এবং তাঁদের অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে অবিলম্বে এই ধরনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ আমার সঙ্গে একমত হবেন। আমাদের মতভেদ থাকা সত্ত্বেও আমরা একে অপরের শত্রু নই।'
শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত এবং তাঁর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে হিংসা চলছে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে। হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় দাসকে গ্রেফতারের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের হামলায় অন্তত ৫০ জন হিন্দু আহত হন। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিটি জেলায় শান্তিপূর্ণ সভা আয়োজন করে। তবে এই শান্তিপূর্ণ বৈঠকে চরমপন্থী গোষ্ঠী হামলা চালায়। চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসলামিক দলগুলো। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের সভাপতি। চিন্ময় প্রভু নামেও লোকে তাঁকে চেনে। তিনি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। বাংলাদেশে ইসকনের ৭৭টিরও বেশি মন্দির রয়েছে এবং ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।