বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় সেনা টহল দলের ওপর বিক্ষোভকারীদের হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। শনিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেনা টহল দলের ওপর হামলা করে। বিক্ষোভকারীরা গোপালগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দায়িত্ব পালনরত সেনাবাহিনীর দুটি টহল দল ঘটনাস্থলে যায়। সেসময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা সেনা টহল দলের ওপর ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারে এবং অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করে। বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সেসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনা টহল দল চার রাউন্ড এ্যামোনিশন ফায়ার করে। পরিস্থিতির তীব্রতা দেখে ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই হামলায় ৫ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহত সেনা সদস্যরা আশঙ্কামুক্ত ও চিকিৎসাধীন। এদিকে শনিবার বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ শীর্ষ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। এমন এক সময়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বিচার বিভাগ সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা রাজপথে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করে এবং বিচারপতিদের পদত্যাগের জন্য মাত্র দুই ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের ঘোষণা করেন। এরপর বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয় সৈয়দ রেফাত আহমেদকে।
ছাত্ররা আল্টিমেটাম দিয়েছিল
বিক্ষোভকারীরা শনিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করেছিল এবং ৬৫বছর বয়সী প্রধান বিচারপতিকে দুই ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম জারি করেছিল। এর পর বিচারপতি পদত্যাগ করেন। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রকে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। নজরুল বলেন, পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের কাছে পাঠানো হবে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর সুপ্রিম কোর্টের অন্য পাঁচ বিচারপতি আইন মন্ত্রকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে কেন আন্দোলনকারীরা?
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত। আন্দোলনকারীরা দেশের বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠনেরও দাবি করেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর শেখ হাসিনা সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে এসেছেন। এরপর বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনুস।
হিংসার ভয়ে পদ ছেড়েছেন!
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সব বিচারপতিকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান। তবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি হাসান সভা স্থগিত করেন এবং পরে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা করেন। শত শত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জড়ো হলে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈন্য মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে বিচারপতিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শান্তি বজায় রাখতে এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি না করার আহ্বান জানায়।
সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান ইউনুসের
একটি স্বার্থান্বেষী মহল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মাধ্যমে দেশে হট্টগোল উসকে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মহম্মদ ইউনুস। এ সময় তিনি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানান। শনিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই আহ্বান জানান ড. ইউনুস। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়ার পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তিনি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. ইউনুস বলেন, ‘সংবাদপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবেদন আসছে। তারা কেন হামলার শিকার হবে? তারা কী দেশের নাগরিক নন? তোমরা (শিক্ষার্থীরা) দেশকে বাঁচাতে পেরেছ, সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে কি বাঁচাতে পারবে না?’ এ ধরনের হামলাকে ঘৃণ্য কাজ উল্লেখ করে তিনি শিক্ষার্থীদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সংখ্যালঘু পরিবারকে যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তোমাদের বলতে হবে, কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। তারা আমাদের ভাই, আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি, আমরা একসঙ্গেই থাকব।’ পুরো বাংলাদেশকে একটি পরিবার উল্লেখ করে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, ‘এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর নেই। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে কিন্তু এত সুন্দর পরিবার নেই।’