তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হল ঢাকার বাংলা অ্যাকাডেমির অমর একুশে বইমেলায়। ভাষার জন্যে প্রাণ উৎসর্গ করা সাহসী শহিদদের স্মরণে প্রতিবছর বাংলাদেশে আয়োজিত হয়ে থাকে অমর একুশে বইমেলা। হাসিনার বিদায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবছরও সেই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। আর সেখানেই ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার ‘সব্যসাচী প্রকাশনা’র স্টলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, আপাতত সব্যসাচী প্রকাশনার স্টল বন্ধ থাকবে। যতটুকু অপরাধ সেই অপরাধের মামলা হবে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বইমেলায় ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলা একাডেমির সঙ্গে কথা হয়েছে, আপাতত ১২৮ নম্বর স্টলটি বন্ধ থাকবে। সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবকে আমরা থানায় নিয়ে যাচ্ছি। তিনি যতটুকু অপরাধ করেছেন সেই অপরাধে মামলা হবে।
এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকা ‘সব্যসাচী’ নামের স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে হট্টগোল হয়। এই স্টলের বিরুদ্ধে নাস্তিকতা প্রচারের অভিযোগ তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রবিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করা হয়েছিল। এরপর সোমবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের বইমেলায় নিষিদ্ধ করা হয় লেখিকার বই 'চুম্বন।' এই বইটি রাখায় 'সব্যসাচীর' স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু কট্টরপন্থী ইসলামী প্ররোচনা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। নোটিজেনরা এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। কেউ কেউ এর প্রতিবাদে লিখেছেন, 'অমর একুশে বইমেলা আরেকবার কলঙ্কিত হল। তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করায় সব্যসাচীর স্টলে হামলা চালিয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। আক্রমণ করা হয়েছে প্রকাশক দম্পতি শতাব্দী ভবকে।' ভিন্নমতের মানুষের লেখা বই প্রকাশ করা এবং তা বইমেলায় বিক্রি করায় তাঁদের এই পরিণতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশের বইমেলার স্টলে হামলার জেরে সোমবার সন্ধ্যায় রীতিমতো উত্তাল হয় ঢাকা। লেখিকা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান লেখিকা নিজেও।
এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসও। তিনি হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। সোমবার রাতে তিনি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ বাংলাদেশে নাগরিকদের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। একুশে বইমেলা এ দেশের লেখক ও পাঠকদের প্রাণের মেলা। এ দেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-সহ সব স্তরের মানুষের মিলনস্থল। বইমেলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ণ করে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে।’