চট্টগ্রামের হাজারীগলি এলাকায় সম্প্রতি এক বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ঘটনাটি ঘটে কোতোয়ালি থানাধীন হাজারী গলিতে, যেখানে মিয়া শপিং সেন্টারের এক মুসলিম ব্যবসায়ী উসমান আলি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ইসকন সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর জেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন স্থানীয় হিন্দু ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।
ঘটনা ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
জানা গেছে, চট্টগ্রামের হাজারী গলি এলাকা প্রধানত হিন্দু ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যকেন্দ্র। ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদ শুরু করলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজিত হয়ে ওঠে। উক্ত ঘটনার পরপরই সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, যখন পুলিশ উসমান আলিকে আটক করার চেষ্টা করে, তখন উত্তেজিত হিন্দু জনতা তাঁকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ও জনতার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
স্থানীয় হিন্দুদের অভিযোগ
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পুলিশের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থকরাও ঘটনাস্থলে এসে সহিংসতায় জড়িত হন। এরপর রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে অনেক হিন্দু ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় হিন্দুদের অভিযোগ, এসময় অনেককে নির্যাতন করা হয় এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়, যাতে ঘটনার কোনও প্রমাণ না থাকে। হিন্দু ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের অনেকের দোকানে লুটপাট চালানো হয়েছে এবং মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে গেছে। হাজারীগলির সোনা ও অলংকারের দোকানগুলোতেও হামলা ও লুটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
প্রশাসনের পদক্ষেপ ও তদন্ত
ঘটনাটি ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম প্রশাসনের নজরে এসেছে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে, এবং আরও সহিংসতা এড়াতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সাথে আলোচনা চালাচ্ছে, যাতে পুনরায় সংঘাত না বাড়ে এবং স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি বজায় থাকে।