ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে কর্মীদের থেকে। বাংলাদেশে এহেন অগণতান্ত্রিক নির্দেশিকা জারির রাতেই চুপচাপ আরও এক তালিবানি ফতোয়া জারি হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশি মহিলাদের এবার থেকে নির্দেশিত পোশাকই পরতে হবে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতেই ক্ষোভ সৃষ্টি করেনি, আফগানিস্তানের তালিবানি শাসনের সঙ্গেও তুলনা করেছে মুহাম্মদ ইউনূসেপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বদল হল সিদ্ধান্তে।
কী ফতোয়া?
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে মহিলা কর্মীদের ছোট পোশাক পরা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। স্লিভলেস জামা, লেগিংস পরায় নিষেধ জারি করা হয়। মহিলা ব্যাঙ্ককর্মীদের বলা হয় শাড়ি কিংবা সালওয়ার কামিজ পরতে।
বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের তরফে জারি করা সেই ফতোয়াতে বলা হয়েছে, হিজাব পরতে হবে মহিলাদের। সঙ্গে পরতে হবে ফর্মাল স্যান্ডাল এবং জুতো। HR টিম আরও জানায়, পুরুষ কর্মীরাও পরতে পারবেন না ছেঁড়া জিন্স কিংবা চিনো ট্রাউজার। কেউ এমনটা না মানলে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে। প্রতিটি ব্যাঙ্কে এই পোশাক নির্দেশিকা মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা নজর রাখতে একটি অফিসার নিয়োগ করার কথাও বলা হয়।
বিক্ষোভ শুরু হয় দেশ জুড়ে। একনায়কতন্ত্র চালানোর অভিযোগ তুলে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন সাংবাদিক, সাধরণ মহিলারা।
নেটিজেনরা পোস্ট করতে শুরু করেন, 'একনায়কতন্ত্র চলছে বাংলাদেশে। এটাই নয়া তালিবানি শাসন।'
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফৌজিয়া মসলেম স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে।'
সিদ্ধান্ত বদল
তবে দেশজুড়ে ওঠা বিতর্কের মাঝে পড়ে শেষ পর্যন্ত মহিলাদের পোশাক ফতোয়ার সিদ্ধান্ত বদল করে নেয় ব্যাঙ্ক। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'এটা কেবলমাত্র একটি অ্যাডভাইজরি। হিজাব বা বোরখা পরার জন্য কেউ বাধ্য করতে পারে না।' নতুন বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অফিসে পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি, কোনও সার্কুলারও জারি হয়নি।
বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, কট্টরপন্থী মহম্মদ ইউনুস এবং মৌলবাদী জামাতের শাসনে দিনে দিনে আফিগানিস্তান হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তালিবানি পোশাক ফতোয়া সে কথাই প্রমাণ করছে।
সোচ্চার তসলিমা
পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।ব্যাঙ্কের পোশাকবিধির সমালোচনা করে তিনি লেখেন, 'শুধু সালোয়ার কামিজ পরলে চলবে না, ওড়না পরতে হবে। কেন ওড়না পরতে হবে? স্তন আছে বলে? স্তন কি প্রয়োজনীয় অঙ্গ নয় নারীর শরীরের?সেটিকে একের পর এক কাপড় দিয়ে ঢাকতে হবে কেন? স্তন কি লজ্জার জিনিস যে লুকোতে হবে? স্তনকে লজ্জার জিনিস তারাই মনে করে যারা নারীর আস্ত শরীরকেই লজ্জাকর বলে মনে করে। তারা শুধু ওড়না নয়, নারীর গায়ে হিজাব আর বোরখাও চড়িয়েছে। তারা পুরুষের শরীরকে লজ্জাকর বলে মনে করে না, তাই ওড়না,হিজাব,বোরখাকে পুরুষের পোশাক বলে ঘোষণা করেনি।'