কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে হিংস শুরু হওয়ার পর জারি করা কারফিউ আজ বৃহস্পতিবারও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে। এতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী বাদে বাকি ৬০ জেলায় কারফিউ শিথিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। এছাড়া সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চলবে সরকারি বেসরকারি সব অফিস।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল হিংসা। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায়, শুক্রবার রাতে জারি করা হয় কারফিউ। অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেদিন মধ্যরাতে মাঠে নামে সেনবাহিনী। এরপর রবিবার থেকে সব ধরনের অফিস ও গার্মেন্টস বন্ধ ঘোষণা করে জারি করা হয় সাধারণ ছুটি। ছুটির পর বুধবার থেকে খুলেছে সরকারি, বেসরকারি সব অফিস। তবে, সকাল ৯ টার পরিবর্তে অফিস শুরু হবে সকাল ১১ টা থেকে এবং বিকেল ৫ টার পরিবর্তে অফিস চলবে বিকেল ৩টে পর্যন্ত। কারফিউ শিথিলের সময় সারাদেশে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা। চলবে পোশাক শিল্প কারখানার কাজও। এদিকে, কারফিউ শিথিলের সময়ে মহাসড়কে চলবে দূরপাল্লার যানবাহন।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাতে আসা-যাওয়া করছে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও যাত্রীবাহী বাস। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।এদিকে জানা যাচ্ছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও গত মঙ্গলবার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে এ নিয়ে ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।
এদিকে সংঘাত–সংঘর্ষের পর বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। বুধকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থার মাধ্যমে সারা দেশের এই তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে, কোটা আন্দোলন প্রশমিত হওয়ার পর এখন শুরু হয়েছে ধর-পাকড়ের পালা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এই আন্দোলনকে হিংসাত্মক আকার দিয়েছিল কিছু দুষ্কৃতী। এমনটাই দাবি হাসিনা সরকারের। সাধারণ মানুষের কাছে এই দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। বুধবার (২৪ জুলাই) এই বিষয়ে নাগরিকদের এসএমএস করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর। নাশকতার সময়ের ছবি-ভিডিয়ো ফুটেজও তাদের কাজে লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তথ্য প্রদানকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে তারা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা সূত্রে খবর, বুধবার পর্যন্ত গোটা দেশে ১৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে। ধৃতদের তালিকায় রয়েছেন বিএনপি ও জামাতের বেশ কয়েক জন নেতাও।
বুধবার থেকেই ঢাকা-সহ চার জেলায় সাত ঘণ্টার জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়েছে। চার ঘণ্টার জন্য খুলেছে অফিস-কাছারি। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুমতি পেয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এখনই খুলছে না বলে ‘বিবিসি বাংলা’কে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে হাসিনার সরকার। তার পর পর্যায়ক্রমে খোলা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। ঢাকার রাজপথে এখনও পুলিশি টহল জারি। মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জওয়ান।